চট্টগ্রামে প্রথম ধাপে সন্দ্বীপ উপজেলার ১২ ইউনিয়নের নির্বাচনে দুটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে দুইজন বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এদিকে আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলার ৩৮ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এই ৩৮ ইউপিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। এতে ১৪ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অবশিষ্ট ২৪ ইউনিয়নে এখন মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ৮৬ প্রার্থী। এর মধ্যে অনেক বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছে।
যেসব ইউনিয়ন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন সেগুলো হলো, সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর, মুরাদপুর, কুমিরা, সোনাইছড়ি, মিরসরাইয়ের করেরহাট, জোরারগঞ্জ, ধুম, ওসমানপুর, কাটাছড়া, মঘাদিয়া, মায়ানী, সাহেরখালী, হাইতকান্দি ও ইছাখালী ইউনিয়ন। এদিকে আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউপি নির্বাচনে অনেক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা বিদ্রোহীদের আতংকে আছেন। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে বিদ্রোহী দমনে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দিকেই ঝুঁকছে দলটির নেতারা। ৩৮টি ইউপির মধ্যে ২৪টিতেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। এরমধ্যে কয়েকটিতে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থীরাও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অন্যদিকে সীতাকুন্ডের বারৈয়াঢালায় স্বতন্ত্র দুইজন, বাড়বকুণ্ডে একজন, বাঁশবাড়িয়ায় একজন, ভাটিয়ারীতে একজন, সলিমপুরে তিনজন, মিরসরাইয়ের হিঙ্গুলিতে একজন, দুর্গাপুরে একজন, মিরসরাইয়ে তিনজন, মিঠানালায় দুইজন, খৈয়াছড়ায় একজন, ওয়াহেদুপুরে একজন, ফটিকছড়িতে পাঁচজন, দাঁতমারায় চারজন, নারায়ণহাটে চারজন, হারুয়ালছড়িতে পাঁচজন, পাইন্দংয়ে ছয়জন, কাঞ্চননগরে একজন, লেলাংয়ে দুইজন, রোসাংগিরীতে একজন, জাফতনগরে দুইজন, ধর্মপুরে তিনজন, আবদুল্লাহপুরে একজন, সমিতিরহাটে চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। মূলত স্বতন্ত্র এসব প্রার্থীর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। স্বতন্ত্রের আড়ালে তারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানান, বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে দলীয় আবেদন ফরম গ্রহণ করে জমা দেয়ার সময় তারা অঙ্গীকার করেছেন, দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষে করবেন। দলীয় সিদ্ধান্ত মানবেন বলে তারা অঙ্গীকারাবদ্ধ। তারপরও এই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে কেউ যদি প্রার্থী হন আমাদের প্রথম কাজ তাকে বুঝিয়ে বসিয়ে দেয়া। দল করলে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে হবে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করা উচিত নয়।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আজাদীকে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে কেন্দ্রের কঠোর বার্তা রয়েছে। গতবারের নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের নাম এবার কেন্দ্রে না পাঠানোর জন্য নির্দেশনা রয়েছে। তাদের নাম আমরা এবার কেন্দ্রে পাঠাবোনা। এবারও যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদ্রোহীদের সংগঠনের কোন স্তরের কমিটিতে না রাখার ব্যাপারে কেন্দ্রের সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে।
আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ধাপে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ১৩, হাটহাজারী ১৩ ও রাউজানের ১৪ ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ২১ অক্টোবর থেকে মনোনয়ন বোর্ড দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছেন। আজকালের মধ্যেই চট্টগ্রামের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
ইতোমধ্যে রাউজান, হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী একেবারেই নেই। এই দুই উপজেলায় একক প্রার্থীরাই মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে হাটহাজারীর বেশ কয়েক ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আড়ালে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।