বোলারদের দারুণ বোলিং। প্রতিপক্ষকে স্বল্প রানে বেঁধে ফেলা। টপ অর্ডারের ব্যাটারদেরও দারুণ শুরু। সব মিলিয়ে জয়ের মত দারুণ আবহ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু মাঝপথে হঠাৎ ব্যাটিং ধসে সব এলোমেলো হয়ে গেল। গাজানফার নামক একজন স্পিনারের ঘূর্ণির মুখে পড়ে বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেল। তার সাথে অভিজ্ঞ রশিদ খান যোগ দিলে দারুণ সম্ভাবনার একটি ম্যাচের অপমৃত্যু ঘটে। ২৩৬ রানের সহজ টার্গেট পেয়েও মিডল অর্ডার ব্যাটারদের চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশ হারে ৯২ রানের বিশাল ব্যবধানে। আর তাতেই তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিতে সিরিজে এগিয়ে গেল আফগানিস্তান। মাত্র কিছুদিন হলো এই মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলকে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়েছিল আফগানিস্তান। সে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বিপক্ষেও এগিয়ে গেল তারা। মাত্র ১৮ বলের ভেল্কিতে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিল আফগানিস্তানের দুই স্পিনার গাজানফার এবং রশিদ খান। এর আগে অবশ্য দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন মোহাম্মদ নবী এবং হাশমত উল্লাহ শহীদি। কিন্তু মাত্র ২৩ বলে ১১ রান যোগ করতে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ফলে প্রতিপক্ষকে কম রানে বেঁধে ফেলেও বড় হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো বাংলাদেশকে। আগের দুটি টেস্ট সিরিজের মত এই সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও ফুটে উঠল ব্যাটিং দৈন্যতা। আর সে ব্যাটিং ব্যর্থতায় আরো একটি হার বাংলাদেশের।
টসে জিতে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তানকে প্রথম ধাক্কাটা দেন তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের দ্বিতীয় এবং নিজের প্রথম ওভারে রহমানুল্লাহ গুরবাজকে ফেরান মুশফিকের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত করে। এরপর শুরু মোস্তাফিজের তোপ দাগানো। পরপর দুই ওভারে রহমত শাহ এবং সাদিকুল্লাহ আতালকে ফেরান মোস্তাফিজ। একই ওভারে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকেও ফেরান তিনি। ততক্ষণে ৩৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে আফগানিস্তান। গুলবাদিন নাইব এসে অধিনায়ক হাশমত উল্লাহ শহীদিকে ৩৬ রান সঙ্গ দেন। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে এ জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। নাইব ফিরেন ২২ রান করে। এরপর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন হাশমত উল্লাহ শহীদি এবং মোহাম্মদ নবী। ১০৪ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন দুজন। শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজ এসে ভাঙেন এ জুটি। তিনি বোল্ড করেন ৯২ বলে ৫২ রান করা হাশমত উল্লাহকে। জুটি ভাঙলেও বাংলাদেশের বোলারদের কচু কাটা করছিলেন মোহাম্মদ নবী। একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করে যান তিনি। ৭৯ বলে ৮৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত তাসকিনের বলে তানজিম সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নবী। ৪টি চার এবং ৩টি ছক্কা মারেন নবী। শেষ দিকে নেনগেয়ালিয়া খারোটে ২৮ বলে ২৭ রান করলে ২ বল বাকি থাকতে ২৩৫ রানে অল আউট হয় আফগানিস্তান। বাংলাদেশের দুই পেসার তাসকিন আহমেদ এবং মোস্তাফিজুর রহমান নিয়েছেন ৪টি করে উইকেট। যেখানে তাসকিন খরচ করেন ৫৩ রান আর মোস্তাফিজ খরচ করেন ৫৮ রান।
জবাবে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই হারায় তানজিদ তামিমকে। গাজানফারের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন তামিম। দ্বিতীয় উইকেটে বেশ ভালই এগুচ্ছিলেন সৌম্য সরকার এবং অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ৫৩ রানের জুটি গড়েন দুজন। আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের করা ১২তম ওভারের তৃতীয় বলে জীবন পান শান্ত। শর্ট বলটাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের দলপতি। কিন্তু আফগান কিপার ক্যাচটা নিতে পারেননি। একই ওভারের শেষ বলে এবার উড়িয়ে মারতে গেলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু মিড উইকেটে একেবারে সীমানায় গিয়ে ফজল হক ফারুকীর ক্যাচে পরিণত হন সৌম্য। ৪৫ বলে ৩৩ রান করেন সৌম্য। তৃতীয় উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের সাথে আরো একটি পঞ্চাশোর্ধ জুটি গড়েন শান্ত। নিজের হাফ সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও সেটা তুলে নিতে পারলেন না টাইগার অধিনায়ক। মোহাম্মদ নবীর বলে হাশমত উল্লাহ শহীদির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৬৮ বলে ৪৭ রান করা শান্ত। সেই সাথে ভাঙে ৫৫ রানের জুটি। এরপর শুরু হয় ব্যাটিং ধ্বস। মাত্র ৯ বলের ব্যবধানে ফিরেন মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ এবং মুশফিক। বিশেষ করে দুই অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ এবং মুশফিকের আউট দলকে খাদের কিনারায় পৌঁছে দেয়। যেখান থেকে আর উঠে আসতে পারেনি। যে ওভারে মুশফিককে ফিরিয়েছেন সে ওভারেই রিশাদ হোসেনকেও ফেরান গাজানফার। পরের বলে ফেরার তাসকিনকে। আর এর ফলে নিজের পঞ্চম উইকেট তুলে নিলেন এই স্পিনার। এরপর রশিদ খানের ঘূর্ণিতে বাংলাদেশ পারল না কোমর সোজা করে দাঁড়াতে। উল্টো তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ল বাংলাদেশের ব্যাটিং। ফলে ৩৪.৩ ওভারে ১৪৩ রান করে অল আউট হয় বাংলাদেশ। আফগান স্পিনার গাজানফার একাই নিয়েছেন ২৬ রানে ৬ উইকেট। আগের ৫ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে মাত্র ৪ উইকেট নেওয়া গাজানফার এই ম্যাচে নিলেন ৬ উইকেট। রশিদ খান নিয়েছেন ২টি উইকেট।