বাঁচানো গেল না চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জলদি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ঝিরির কাদায় আটকে পড়ে আহত হওয়া হাতিটিকে। গত ৫ মার্চ কাদা থেকে উদ্ধারের পর দীর্ঘ ২৩ দিন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে নিবিড় পরিচর্যা ও চিকিৎসা দেয়ার পরও আজ শুক্রবার সকালে মারা যায় হাতিটি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিত ভট্টাচার্য বলেন, “২৫ মার্চ থেকেই মুখে খাবার খাচ্ছিল না হাতি। আমরা স্যালাইন ও এন্টিবায়োটিক চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কাদায় আটকে পড়ে আহত হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় খাবার ও পানি না পেয়ে আগে থেকেই খুবই দুর্বল ছিল। উদ্ধারের পর সে উঠে দাঁড়াতে বা বসতে না পারলে মোটামুটি খাবার খাচ্ছিল। কিন্তু তিন দিন খাবার না খাওয়ায় আরো দুর্বল হয়ে আজ সকাল ১১:৩৫ টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।”
দীপান্বিত ভট্টাচার্য জানান, গত ৫ মার্চ স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে জলদি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নাপোড়া বিটের গভীর বনে ঝিরির কাদায় আটকে পড়া বন্য হাতিটিকে উদ্ধার করা হয়। আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী মা হাতিটিকে ঝিরির পাশেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল।
তিনি বলেন, উদ্ধার করার পরদিন থেকে দোহাজারি সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জনের তত্ত্বাবধানে হাতিটির চিকিৎসা শুরু হয়। বন বিভাগের ১০-১২ জন কর্মী প্রতিদিন প্রায় চার কিলোমিটার পায়ে হেটে পাহাড় ঝিরি ডিঙিয়ে গভীর বনে গিয়ে হাতিটির পরিচর্যা করেছে। তবে তার শারীরিক অবস্থার তেমন কোন উন্নতি লক্ষ করা যায়নি।
দ্বীপান্বিতা আরো বলেন, হাতিটির ওজন ২ টনের বেশি। দুর্গম বনের গভীরে হওয়ায় সেখান থেকে উদ্ধর করে তাকে সাফারি পার্কে নিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। দিনের বেলায় যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা ও সেবা দেয়া হচ্ছিল। রাতে ওই এলাকায় বন্য হাতির বিচরণ থাকায় সেখানে থাকা নিরাপদ নয়। তারপরও হাতিটিকে সারিয়ে তুলতে বন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা আপ্রান চেষ্টা করে গেছেন।
তিনি বলেন, মাঝখানে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে হাতিটিকে কপিকলের সাহায্যে তুলে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়। এরপর থেকে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়।
হাতিটির চিকিৎসা তত্ববধানের দায়িত্বে থাকা ডা জুলকারনাইন বলেন, ‘উদ্ধারের পরদিন থেকে হাতিটিকে এন্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ড্রাগ দেয়া শুরু হয়। ১২ তারিখ পর্যন্ত তার শারিরীক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। তবে, একজন আন্তর্জাতিক হাতি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে তাকে ড্রাগ দেয়া বন্ধ করার পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। আমরা বিভিন্ন দেশের হাতি বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তাদের পরামর্শও নিয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারলাম না।
হাতিটিকে বাঁচাতে না-পারার জন্য নিজেদের অক্ষমতা ও অপ্রতুলতাকে দায়ী করে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, “বনে কোন হাতি বা বড় কোন বন্যপ্রাণী আহত হলে তাকে উদ্ধার করার মত কোন সক্ষমতাই আমাদের নেই। হাতিটিকে গভীর বন থেকে উদ্ধার করতে বিশেষায়িত হেলিকপ্টারের প্রয়োজন হতো। আবার তাকে রাখার মত ভেট হাসপাতালের প্রয়োজন হতো। কোন কিছুই আমাদের নেই।
তিনি বলেন, আমাদের পুরো চট্টগ্রাম বিভাবে ভেটেরিনারি সার্জন আছে মাত্র একজন। সহকারী বন সংরক্ষকের ছয়টি পোস্ট থাকলেও সব খালি। এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। গত ২৩ দিন আমাদের ১২-১৩ জন কর্মী প্রতিদিন বনের পাঁচ কিলোমিটার গভীরে গিয়ে হাতিটির পরিচর্যা করেছে। আপ্রাণ চেষ্টা করেও আমারা তাকে বাঁচাতে পারিনি।