আধুনিক যুগে মানুষের সহচার্যের সম্পূর্ণ বাইরে গিয়ে গভীর গুহায় নির্জনে দিনের পর দিন একা থাকা সম্ভব? বেশিরভাগ মানুষের কাছে এটা কল্পনাতীত মনে হতে পারে, যদিও স্প্যানিশ এক পর্বতারোহী সম্প্রতি সেটিই করে দেখিয়েছেন। কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ নয়, টানা ৫০০ দিন তিনি কাটিয়েছেন ৭০ মিটার (২৩০ ফুট) গভীর এক গুহায়। সিএনএন জানিয়েছে, ৫০ বছর বয়সী অ্যাথলেট বিয়েত্রিজ ফ্লামিনি শুক্রবার গ্রানাডার বাইরের একটি গুহা থেকে বের হয়ে আসেন। তবে তার আগে সেই গুহায় টানা ১ বছর ৪ মাস ১৫ দিন কাটে তার। ওই সময়ে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তার যোগাযোগও ছিল ন্যূনতম। গুহার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে দক্ষিণ স্পেনের বসন্তের আলোতে এসে এই পর্বতারোহী সাংবাদিকদের বলেন, সময়টা যেন উড়ে গেছে। আর তার বাইরে আসার ইচ্ছাও ছিল না। ‘ওরা যখন আমাকে নিতে এল, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। ভেবেছিলাম কিছু একটা হয়েছে। আমি বললাম, এর মধ্যেই (সময় হয়ে গেছে), নিশ্চয় না। আমি এখনও আমার বই–ই শেষ করতে পারিনি।’ যে গুহায় ফ্লামিনি একা ৫০০ দিন কাটানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, তার বাইরে একটি সহায়তা টিম ছিল। খবর বিডিনিউজের।
তারা জানান, গুহার ভেতরে মানুষের মন এবং ২৪ ঘণ্টার চক্রে সেখানে তার শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত কী কী পরিবর্তন ঘটে সেটা জানতেই বিজ্ঞানিদের পরীক্ষামূলক চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়ে ফ্লামিনি দীর্ঘ সময় গুহায় কাটানোর একটি ‘বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছেন’। তিনি যখন গুহায় প্রবেশ করেন, তখন তার বয়স ছিল ৪৮ বছর; দুটি জন্মদিন একা একাই গুহার ভেতরে পালন করেছেন তিনি। ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর তার সেই চ্যালেঞ্জ শুরু হয়। সময়টা ইউক্রেইন যুদ্ধ ও ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর আগে। ফ্লামিনির সহায়তা টিম বলছে, আট দিনের জন্য বাইরে এসেছিলেন তিনি। তবে একটি তাঁবুতে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। গুহার ভেতরে থেকে সহায়তা টিমকে অডিও, ভিডিও পাঠাতে সেখানে একটি রাউটার মেরামতের কাজ চলে সেই কয়েক দিন। দীর্ঘদিনের সেই অভিযান শেষে শুক্রবার যখন তিনি গুহা থেকে বের হয়ে আসেন, চারপাশে ক্যামেরা তাকে ঘিরে ধরে। সহায়তা টিমের সদস্যরা স্বাগত জানিয়ে আলিঙ্গন করেন। গুহার ভেতরে একা থাকলেও গুরুতর কোনো সমস্যা কিংবা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে সহায়তা টিমকে সিগন্যাল পাঠানোর ব্যবস্থা ছিল।
ফ্লামিনি যখন বাইরে বের হয়ে এলেন, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কখনও তিনি ‘প্যানিক বাটন’ চাপা কিংবা বাইরে বের হয়ে আসার কথা ভেবেছিলেন কিনা। জবাবে তিনি বলেন, কখনোই না। আসলে আমি বের হতেই চাইনি।