২২ শ শয্যায় চমেক হাসপাতাল সেবা বাড়বে, বাড়বে বরাদ্দও

| শনিবার , ২৮ মে, ২০২২ at ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১৩১৩ থেকে ২২ শ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিশাল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের চিকিৎসায় একমাত্র ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জন্য এটি বড় জরুরি ছিল। গত ২৬ মে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর প্রদত্ত এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ১৩১৩ শয্যা হতে ২২০০ শয্যায় উন্নীতকরণ ও বর্ধিত শয্যায় সেবা চালুকরণে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হল। তবে শর্ত থাকে যে, এ সংক্রান্ত সকল বিধি-বিধান, আনুষ্ঠানিকতা ও নিয়ম-কানুন অবশ্যই পালন করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়ায় ২২’শ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনের বিষয়টি এখন আনুষ্ঠানিক চিঠির মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে, শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির অনুমোদনের প্রেক্ষিতে হাসপাতালের জনবল বাড়বে। একই সাথে রোগীর খাবার, ওষুধসহ সব খাতেই বরাদ্দ বাড়বে। এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, অনুমোদিত ১৩১৩ শয্যার বিপরীতে আমরা বাজেট-বরাদ্দ পেয়ে আসছি। তবে চিকিৎসকের সংখ্যা বাদ দিলে হাসপাতালের জনবল কিন্তু ৫০০ শয্যার। এখন শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জনবলও বাড়তি পাওয়া যাবে। বাজেট-বরাদ্দ তো বাড়বেই।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যা প্রায় দ্বিগুণে উন্নীতকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারটি নিশ্চিত করেন। চট্টগ্রামের এই ‘সুখবরের’ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকে নানাভাবে সহায়তা করছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বেড সংখ্যা বাড়ানোর প্রেক্ষিতে ঠিক কত টাকার খরচ বাড়বে তা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ নিরূপণ করবে।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সারা বিশ্বে সমাদৃত। আমরা যদি সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি কাঠামো দেখি, সেখানে মূল জায়গাটিতে বলা হয়েছে, একজন মানুষের প্রথম অগ্রাধিকার স্বাস্থ্যসেবা। মানুষ সেটির মূল কেন্দ্রতে থাকবে। যে সেবাগুলো নেওয়ার জন্য মানুষ যেসব জায়গায় যাবে, সেটি সরকারি বা বেসরকারি হোক, সেবাটি যেন মানসম্মত হয়। তাকে সেবা দেওয়ার কাজে যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করা হবে, সেগুলোও মানসম্মত হতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশের ধনী মানুষ রয়েছে, তারা তাদের চিকিৎসার ব্যয় নিজেদের মতো করে নিতে পারে। যারা চিকিৎসার ব্যয় নিতে পারছে না, তাদের ক্ষেত্রে সরকার বহন করবে। সেটি একই সেবার আওতায় আসবে। এখানে যেসব নীতি থাকবে, সেটি অবশ্যই সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অনুকূলেই তৈরি করতে হবে। এ জন্য ব্যাপক প্রচার ও প্রসার থাকবে। প্রত্যেক মানুষের সর্বস্থানে এবং সর্বস্তরে স্বাস্থ্য সেক্টরের একটি অ্যাকসেস থাকতে হবে। এটি জন্মগত অধিকার, এটি রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতেই হবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য দেশের উন্নয়ন হিসেবে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে যখন প্রয়োজন তখনই যেকোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা বিনা মূল্যে গ্রহণ করতে পারবে, তখনই আমাদের দেশে ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে।
একথা সত্যি যে, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আমাদের দেশে চিকিৎসা সেবা অনেকটাই সমপ্রসারিত হয়েছে। কিন্তু তাও এখনো পর্যন্ত সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা থেকে আমরা অনেক দূরে আছি। ফলে স্বাস্থ্যখাতে যেমন বরাদ্দ বাড়াতে হবে তেমনি টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রেও দক্ষতা ও স্বচ্ছতা থাকতে হবে। দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মাত্রা তার আওতার বাইরে হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। তাদের সামর্থ্যের চেয়েও বেশি পরিমাণে সেবা দিয়ে যাচ্ছে এই হাসপাতাল। এখন বর্ধিত শয্যায় সেবা চালুকরণে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছে বলেই বরাদ্দও বাড়াতে রাজি হয়েছে। আমরা সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে