পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ক্ষমতার হালুয়া–রুটির ভাগ–বাটোয়ারার জন্য লালায়িত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ যারা বিএনপি দল গঠন করেছিলেন, ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী দুই বছর ও একাধারে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের চার মেয়াদসহ ২২ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা তাদের পক্ষে এখন আর সহ্য হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে দেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন অগ্রগতিও তারা সহ্য করতে পারছে না। সেই কারণে তারা এখন নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সকালে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট হলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত বৃহস্পতিবার সংসদে ৭ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা হয়েছে। গত ১৫ বছরে বাজেটের অংক সাড়ে ১১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তি দিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, কোনো একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার বৃদ্ধি পাওয়া মানে সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভালো চলছে। দেশের বাজেটের আকার যখন বৃদ্ধি পায় তখন বুঝতে হবে দেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে। বিএনপি–জামায়াত বাজেট ঘোষণার আগেই বিবৃতি রেডি করে রাখে। গত ১৫ বছরের তাদের বিবৃতি–বক্তব্য যদি দেখেন, হুবহু মিল খুঁজে পাবেন।
বাজেটের সমালোচকদের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বাজেট জনগণের কল্যাণে যদি না এসে থাকে তাহলে গত ১৫ বছরে দরিদ্রতা ৪০ শতাংশ থেকে ১৮.৭ শতাংশে নেমে এল কীভাবে? আর অতিদরিদ্রতা ২২ শতাংশ থেকে ৫.৭ শতাংশে কীভাবে নেমে এসেছে? এটি সম্ভবপর হয়েছে বাজেট বাস্তবায়নের কারণেই। বিএনপি–জামায়াত ও কতিপয় বুদ্ধিজীবী আসলে চোখ থাকতেও অন্ধ, কান থাকতেও বধির। ওদের চোখ এবং কান যেন মহান স্রষ্টা ঠিক করে দেন, সেই প্রার্থনা করি।
দেশে বুদ্ধিজীবী কয়েক প্রকার উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটা হচ্ছে সত্যিকারের বিশেষজ্ঞ, আরেকটা হচ্ছে বিশেষ কারণে অজ্ঞ বিশেষজ্ঞ, আরেকটা হচ্ছে সব বিষয়ে বিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ। কিছু বিশেষজ্ঞ নামধারী এবং বিএনপি–জামায়াত প্রতিবারের মতো এবারও বলতে শুরু করেছে, এই বাজেট জনগণের কোনো কল্যাণে আসবে না।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ছয় দফা প্রসঙ্গে ড. হাছান বলেন, পূর্ববাংলার মানুষের মাঝে স্বাধীনতার পক্ষে মনন তৈরি করার জন্যই বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। ছয় দফার পক্ষে মানুষ ব্যাপক সাড়া দেন। বঙ্গবন্ধু ছয় দফা নিয়ে সারা দেশ ঘুরে বেড়ান, যেখানেই বক্তব্য দেন সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হতো। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মুক্তি লাভ করেন।
তিনি বলেন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পর ছয় দফার ওপর ভিত্তি করেই দেশে সাধারণ নির্বাচন হয়। জনগণ ছয় দফার পক্ষেই ভোট দেয়। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান ন্যাশনাল এসেম্বলিতে মেজরিটি পার্টির নেতা নির্বাচিত হন। এরপর ক্ষমতা হস্তান্তরে যখন বাহানা করা হচ্ছিল তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ছয় দফা যখন ঘোষণা করেছিলাম তখন এটি আওয়ামী লীগ কিংবা শেখ মুজিবের দফা ছিল। নির্বাচনের পর এটি জনগণের দফায় পরিণত হয়েছে। জণগণই ছয় দফার পক্ষে রায় দিয়েছে। আমি ছয় দফার বাইরে কোনো আপোস করতে পারব না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি আপোস করতেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া নয়, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি স্বাধীনতার লক্ষ্যে এগিয়ে যান এবং বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সমস্ত সংকট, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় আজকে আওয়ামী লীগ পরপর চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। বিরোধী শক্তি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতাকর্মীকে চোখ–কান সবসময় খাঁড়া রাখতে হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তার জীবন দর্শনের অনুসারী হিসেবে রাজনীতিতে নিবেদিত। আমাদেরকে বুঝতে হবে বিরোধী পক্ষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তারা এখন নানাবিধ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। এই চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র শূন্য করতে আমাদের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থেকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি গ্রহণে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, আমরা পদে পদে অযৌক্তিক ও অরাজনৈতিক প্রতিহিংসার অপঘাতগুলো মোকাবেলা করে যাচ্ছি। এতে আমাদের ক্ষয় নেই। বরং অক্ষয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আমাদের ভিত্তি আরো গভীরে প্রোথিত হচ্ছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ, উপদেষ্টা সফর আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল লতিফ টিপু, ড. নিছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু, থানা আওয়ামী লীগের ফিরোজ আহমেদ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাজী রাশেদ আলী জাহাঙ্গীর, রুহুল আমিন তপন ও মাহবুব কোম্পানী।
উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শেখ মাহমুদ ইছহাক, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শফিকুল ইসলাম ফারুক, সৈয়দ হাসান মাহমুদ শমসের, এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মসিউর রহমান চৌধুরী, হাজী মো. হোসেন, জোবাইরা নার্গিস খান, ইঞ্জিনিয়ার মানস রক্ষিত, আবু তাহের, শহিদুল আলম, নির্বাহী সদস্য আবুল মনছুর, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, বখতেয়ার উদ্দীন খান, ইঞ্জিনিয়ার বিজয় কৃষাণ চৌধুরী, মহব্বত আলী খান, জাফর আলম চৌধুরী, মো. জাবেদ, হাজী বেলাল আহমদ, থানা আওয়ামী লীগের হাজী সিদ্দিক আলম, সাহাব উদ্দীন আহমেদ, আনছারুল হক, রেজাউল করিম কায়সার প্রমুখ।