২,২৩৭ কোটি টাকার চট্টগ্রামের দুই প্রকল্প একনেকে অনুমোদন

২,১৫৫ কোটি টাকায় ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট-২ ও ৪ এর ভূমি অধিগ্রহণ । ৮২ কোটি টাকায় শাহ আমানত বিমানবন্দরের রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৪ মার্চ, ২০২৫ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট(কালুরঘাট) এবং ক্যাচমেন্ট(বাকলিয়া) এর পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার নির্মাণে জমি অধিগ্রহণে ২ হাজার ১৫৪ দশমিক ৯৯ কোটি টাকার প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণে ৮১.৮৮ কোটি টাকার প্রকল্পও গতকাল একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

শাহ আমানত বিমানবন্দরের রানওয়ে প্রকল্প : চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণের একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ২০১৯ সালে ৪৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারিসহ নানা প্রতিকূলতায় নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল একনেকে বাড়তি ব্যয় অনুমোদন প্রকল্পটির বাকি কাজে গতি আনবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় রানওয়ের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। লাইটিং সিস্টেম ও বিদ্যুতায়নসহ ফিনিশিংয়ের কাজও শেষ পর্যায়ে। লাইটারিং সিস্টেম পুরোদমে সম্পন্ন হলে রাতের বেলা এবং কুয়াশার মধ্যে ফ্লাইট অপারেট সহজ হবে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে দেশের দ্বিতীয় ব্যস্ততম এই বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়বে বলে সূত্র জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প : একনেক সভায় গতকাল ২ হাজার ১৫৪ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট(কালুরঘাট) এবং ক্যাচমেন্ট(বাকলিয়া) এর পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কালুরঘাটের হামিদচরের ৭৪ একর জায়গায় প্রকল্পের মূল স্থাপনা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। এটি দৈনিক ৬০ হাজার ঘনমিটার ধারণ এবং প্রয়োজনীয় পরিশোধন করবে। প্রকল্পের অধীনে প্রধান স্যুয়ারেজ লাইন নির্মাণ করা হবে ১১ কিলোমিটার, শাখা স্যুয়ারেজ লাইন ৭০ কিলোমিটার এবং সার্ভিস লাইন হবে ৭০ কিলোমিটার। প্রকল্পের আওতায় ৯৩২টি ম্যানহোল এবং গৃহ সংযোগ ও ক্যাচপিট নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পে দুটি এলাকার ২৮ হাজার ঘরবাড়ি সংযুক্ত করা হবে।

এর আগে গত বছরের ২৫ নভেম্বর একনেকের সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট(কালুরঘাট) এবং ক্যাচমেন্ট(বাকলিয়া) বাস্তবায়নে ৫ হাজার ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও স্যুয়ারেজের প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে জানান, স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট২ এবং ক্যাচমেন্ট৪ এর ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প আজকের (রোববার) একনেক সভায় অনুমোদন হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের পুরো টাকা জিওবি ফান্ড থেকে দেওয়া হবে। মূল প্রকল্পের ৫ হাজার ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার মধ্যে জাইকা অর্থায়ন করবে ৪ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা, বাংলাদেশ সরকার ৯৬৯ কোটি টাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা দেবে ৩৯ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জামালখান, চকবাজার, চান্দগাঁও, শুলকবহর ও ষোলশহরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা উপকৃত হবে। চট্টগ্রাম ওয়াসা পুরো নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করে স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ছয়টি জোনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ক্যাচমেন্ট১ এর কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের আওতায় আনার কার্যক্রম শুরু হয়। এই কার্যক্রমে নগরীর ২১টি ওয়ার্ডের ২৮ হাজার বাড়িঘরে স্যুয়ারেজের লাইন যুক্ত করা হচ্ছে। ২০০ কিলোমিটারের বেশি পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে মাটির ৫ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত গভীরে। নির্মাণ করা হচ্ছে প্রয়োজনীয় ম্যানহোলসহ আনুষাঙ্গিক অবকাঠামো। এর মধ্যে একটি অংশে হালিশহরের চৌচালায় ১৬৩ একর ভূমিতে দুটি সর্বাধুনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা হচ্ছে। যার একটিতে পাইপলাইনের মাধ্যমে আনা বর্জ্য প্রতিদিন নয় কোটি লিটার পরিশোধন করে পরিবেশসম্মতভাবে সাগরে ফেলা হবে। অপর প্ল্যান্টটি ফেক্যাল প্লাসের (বিশেষ ধরনের গাড়িতে বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য) মাধ্যমে সংগৃহীত দৈনিক ৩০০ টন বর্জ্য পরিশোধন করা যাবে। এই প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। তিনি বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের নগরীতে পরিণত করার যাত্রা অনেকটা এগিয়ে দেবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধান উপদেষ্টা কাল স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করবেন
পরবর্তী নিবন্ধট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হচ্ছে আজ থেকে