একটি শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান, যেখানে থাকছেন দুই হাজার অতিথি, ৫০০ বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তি, চার হাজার সেবক। আর টেলিভিশনে সেই অনুষ্ঠান দেখবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। আজ সোমবার হতে যাওয়া রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াকে ঘিরে এমনই আগ্রহ যে, বিবিসি একে ২১ শতকের অতুলনীয় ঘটনা হিসেবে অভিহিত করছে।
বিয়োগান্তক সেই আনুষ্ঠানিকতা আর শোকাবহ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আজ পর্যন্ত লন্ডন বিশ্ব নেতা ও রাজনীতিবিদদের সবচেয়ে বড় সমাবেশও দেখতে যাচ্ছে।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানির শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন অংশের রাজা-রানি, প্রিন্স-প্রিন্সেস, প্রেসিডেন্ট আর প্রধানমন্ত্রীরা এখন লন্ডনে। প্রধানত রানিকে শ্রদ্ধা জানানোর ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান, যে অনুষ্ঠানে বিশ্ব একসঙ্গে এমন এক নারীকে বিদায় জানাবে, বিশ্ব নেতা হিসেবে যিনি দীর্ঘ সময় ধরে স্বীকৃত ছিলেন। খবর বিডিনিউজের।
এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, প্রত্যেকেই রানির শেষকৃত্যে আসতে চান। কারণ, তিনি ছিলেন পরিবারের অন্যতম। এক ধরনের অনুভূতি আছে সবার, যে এটি একটি পারিবারিক শেষকৃত্য। আরেক কূটনীতিক বলেছেন, এটি শতাব্দীর (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ) শেষকৃত্য। প্রত্যেক বিশ্ব নেতা এটি দেখতে এবং তাকেও যেন দেখা যায়, তা চাইবেন। যারা এখানে থাকবেন না বা যাদের দেখা যাবে না, তারা আমাদের সময়ের সেরা ফটো সেশনের সুযোগ হারাবেন।
বিবিসির প্রতিবেদক লরা কুয়েন্সবার্গ বলেছেন, তিনি অনেকবারই বিভিন্ন সম্মেলন উপলক্ষে যুক্তরাজ্যে যাওয়া অতিথিদের ওপর রাজপরিবারের সদস্যদের প্রভাব দেখেছেন। রানির সঙ্গে ছবি তুলতে অনেককে হুড়োহুড়ি, ছোটাছুটিও করতে দেখা গেছে। রানির কাছাকাছি যেতে প্রধানমন্ত্রীদেরকে কার্যত একে অন্যকে কনুই দিয়ে গুঁতা মারতেও দেখার কথা জানিয়েছেন তিনি। এই শেষকৃত্য বিশ্বের জন্য, এমনকি নেতাদের জন্যও বড় সুযোগ, একে অপরকে খুব কাছ থেকে দেখার।
শেষকৃত্যের আমন্ত্রণ তালিকায় রাজনীতি আর ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ আছে। অল্পসংখ্যক দেশকে অতিথির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া ও বেলারুশ আমন্ত্রণ পায়নি। সিরিয়া, মিয়ানমার, আফগানিস্তান ও ভেনিজুয়েলাও তালিকায় নেই। উত্তর কোরিয়ার মতো কিছু দেশের নেতাদের বাদ দিয়ে কেবল রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানিয়ে শীতল সম্পর্ক প্রকাশ করা হয়েছে। রানিকে শ্রদ্ধা জানাতে চীনা নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
রানির রাজত্বকাল ও তার কূটনৈতিক খ্যাতি ছিল অতুলনীয়। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আজকের আয়োজন করা হচ্ছে, যার সঙ্গে সাম্প্রতিক কোনো আয়োজনের তুলনাই হবে না। রানির মৃত্যুর পর যে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে, তার সূক্ষ্ম, নিখুঁত পরিকল্পনায় রানি নিজেও ছিলেন। শ্রমসাধ্য, সুসংগঠিত এই আয়োজনের সম্ভাব্য শক্তি যে কী, সম্ভবত কেউই তা প্রয়াত রানির মতো করে অনুধাবনও করতে পারবেন না।