২১ কিমি দীর্ঘ সাতটি সড়ক হচ্ছে

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ১৪ জুলাই, ২০২৪ at ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

নগরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন করে সাতটি সড়ক নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। নির্মাণের পর রাস্তাগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে ২১ দশমিক ৩৮৭ কিলোমিটার। এ লক্ষ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে একটি প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করেছে চসিক। এর প্রাক্বলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৭৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় সেকেন্ডারি সড়ক সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির ডিপিপি কয়েকদিন আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় ২৮টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, একটি ফুট ওভারব্রিজ ও একটি রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয় ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

বিষয়টি দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, যেসব সড়ক ঘিরে প্রকল্প নিয়েছি ওইসব সড়ক বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রশস্ত। সেখানে সবসময় যানজট লেগে থাকে। এতে ওইসব এলাকার জনগণের চরম দুর্ভোগ হয়। ছাত্রছাত্রী এবং অসুস্থ লোকজনের সমস্যা হয় বেশি। তাই মানুষের কষ্ট লাঘবে প্রকল্প নিয়েছি। প্রকল্পে প্রস্তাবিত সড়কগুলো প্রশস্ত করলে নগরবাসীর কষ্ট লাগব হবে। একইসাথে শহরের অন্যান্য স্থানের সাথে সহজ সংযোগ সড়ক প্রতিষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রধান বন্দর, শিল্প ও বাণিজ্য নগরী। সারা বছর দেশবিদেশের লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ী এই শহরে তাদের ব্যবসায়ী পণ্য ক্রয়বিক্রয়ের জন্য আসেন। রাস্তার অপ্রশস্ততার কারণে সৃষ্ট যানজটের ফলে অনেক কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এতে জাতীয় অর্থনৈতিক অবস্থার ওপরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। প্রস্তাবিত সড়কগুলো প্রশস্ত হলে সমস্যাগুলো দূর হবে।

প্রকল্পভুক্ত সাত সড়ক : প্রকল্পভুক্ত সাতটি সড়ক হচ্ছে ১ দশমিক ১৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ওমর আলী মাতব্বর সড়ক, আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ খাজা সড়ক, ১ দশমিক ৮৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পলিটেকনিক সড়ক, ৪ দশমিক ৩৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ কেবি আমান আলী সড়ক, ১ দশমিক ৬৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ ঈশান মহাজন সড়ক, ২ দশমিক ৬৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ফইল্লাতলী বাজার সড়ক এবং ৬ দশমিক ২৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মুনির নগর থেকে ফইল্লাতলী বাজার সড়ক। এই সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ২৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত সড়কগুলো নির্মাণ ও প্রশস্ত করতে ২৭ দশমিক ১৫৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এজন্য প্রকল্পে ১ হাজার ২৮৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ১০৮ কোটি ৪২ লাখ টাকায় ২২ হাজার ৩০৫ মিটার ড্রেন এবং ২৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকায় ৩০৮ দশমিক ৬০ মিটার আরসিসি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। ফইল্লাতলী বাজার সড়কের সঙ্গে ৩২ লাখ ৯২ হাজার টাকায় রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং এবং পলিটেকনিক সড়কের সঙ্গে একটি স্টিলের ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের ডিপিপিতে বলা হয়, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হবে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ৪৭ হাজার ১০০ ঘনমিটার মাটি দিয়ে সড়ক বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হবে। সড়ক পাকাকরণ শেষ হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। একই সময়ে অন্যান্য কাজও শেষ হবে।

প্রকল্পের ডিপিপিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি চট্টগ্রাম মহানগরে জনগণের নির্বিঘ্ন যাতায়াতের সুবিধাসহ পর্যটন শিল্পের বিকাশের সাথে এবং এলএনজি স্টেশন প্রকল্প, চট্টগ্রাম ইপিজেড প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সাথে সম্পৃক্ত। প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, যাতায়াতের সুবিধা নিশ্চিতসহ পর্যটন শিল্পের বিকাশ, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সাথে সহজ যাতায়াত বৃদ্ধি ও সময় কমানো, টেকসই, নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী (পরিবহন ও সময়) সড়ক অবকাঠামো এবং সমন্বিত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্মাণ।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলাকার সড়ক পথে দুর্যোগকালে নিরাপদ যাতায়াতসহ সামগ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং জলাবদ্ধতা দূরীভূত হবে। ফলে এলাকার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারীর যাতায়াত সুবিধাসহ দুর্যোগের সময় নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচা শিল্পে প্রচুর সম্ভাবনা, কিন্তু কাজে লাগানো যাচ্ছে না
পরবর্তী নিবন্ধজোয়ার-ভাটার সময়সূচি