২০ বছরের পুরনো চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন নিয়ে হিমশিম

চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল । বাড়ছে জাহাজের অবস্থানকাল, কিছু জাহাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কন্টেনার না নিয়ে ছাড়ছে বন্দর । রিপ্লেস না করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য

হাসান আকবর | শুক্রবার , ৭ নভেম্বর, ২০২৫ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের গ্যান্ট্রি ক্রেনের উৎপাদনশীলতা তলানীতে চলে আসছে। বিশেষ করে চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালের ২০ বছরের পুরনো চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন নিয়ে সকলকেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে জাহাজের অবস্থানকাল বেড়ে যাচ্ছে। কোন কোন জাহাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কন্টেনার না নিয়ে বন্দর ছাড়ছে। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্ট কী গ্যান্ট্রি ক্রেন গলার কাঁটা হয়ে গেছে। এসব ক্রেন নতুন করে রিপ্লেস না করলে বন্দরের উৎপাদনশীলতা এবং দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অবশ্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, কী গ্যান্ট্রি ক্রেন আধুনিক শিপিং সেক্টরের অত্যাবশ্যকীয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইকুইপমেন্ট। জাহাজ থেকে কন্টেনার নামানো এবং জাহাজে কন্টেনার বোঝাই করার কাজই মূলতঃ কী গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে করা হয়। অত্যন্ত দামি এসব ইকুইপমেন্টের প্রতিটির দাম বর্তমানে একশ’ কোটি টাকার বেশি। কী গ্যান্ট্রি ক্রেন থাকলে আর জাহাজের ক্রেন ব্যবহার করতে হয় না। কন্টেনার উঠানো নামানোর কাজ অনেক বেশি গতিশীল হয়। এই ক্রেনগুলো জাহাজের ১৫ সারি পর্যন্ত কন্টেনার নামাতে এবং উঠাতে পারে। ক্রেনগুলো ঠিকঠাকভাবে কাজ করলে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ফিডার ভ্যাসেলগুলো ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কন্টেনার নামিয়ে আবার জাহাজ বোঝাই করে নোঙর তুলতে পারে। যা জাহাজের ক্রেন দিয়ে করতে গেলে অনেক বেশি সময় লাগে। তাছাড়া বিশ্বে এখন গিয়ারলেস (ক্রেন ছাড়া) ভ্যাসেলের কদর বেশি। যে বন্দরে বা জেটিতে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন নেই সেখানে গিয়ারলেস ভ্যাসেল হ্যান্ডলিং করা যায় না। কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ছাড়া আধুনিক এবং বিশ্বমানের বন্দর কল্পনাও করা যায় না বলেও সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।

চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯৭৭ সাল থেকে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হলেও কী গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হয় ২০০৫ সালে। মাত্র চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন এনে স্থাপন করা হয় চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালে। ওই সময় ক্রেনগুলো পুরাতন কিনে আনা হয়েছিল। ২০০৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওই চারটি ক্রেনই ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। পরবর্তী চার বছরে কিনে আনা হয় আরো ১৪টি ক্রেন। আর এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ও এনসিটির সবগুলো জেটিতেই কী গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজিত হয়। একটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন স্বাভাবিকভাবে কাজ করলে ঘণ্টায় ৩০ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের ১৮টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন একযোগে কাজ করলে প্রতি ঘণ্টায় হ্যান্ডলিং হওয়ার কথা ৫৪০ টিইইউএস কন্টেনার।

কিন্তু গত বেশ কিছুদিন যাবত চট্টগ্রাম বন্দরে কী গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলো নানাভাবে সমস্যা করছে। দেখা দিচ্ছে যান্ত্রিক ক্রুটি। কখনো ক্যাবল ছিঁড়ে যাচ্ছে, কখনো লক হয়ে যাচ্ছে। কখনো ইঞ্জিন গরম হয়ে যাচ্ছে। আবার ঠিকঠাক করে চালাতে হচ্ছে। বিশেষ করে চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালের চারটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় বেশি সমস্যা করছে। এনসিটির কী গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলোতেও কম বেশি সমস্যা দেখা দেয় বলে ব্যবহারকারীদের সূত্রে জানা গেছে।

একাধিক শিপিং এজেন্সি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা দৈনিক আজাদীকে জানান, ‘কী গ্যান্ট্রি ক্রেন নিয়ে খুবই সমস্যার মধ্যে আছি। বিশেষ করে পুরনো ক্রেনগুলোতে সংকট সবচেয়ে বেশি। ২০ বছরের পুরনো এসব ক্রেন যত দ্রুত সম্ভব সরিয়ে নতুন ক্রেন না বসালে বন্দরের উৎপাদনশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও তারা জানান।

তারা বলেন, ক্রেনের সংকটের কারণে জাহাজে পণ্য হ্যান্ডলিং ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সময় পণ্য না নিয়েই জাহাজকে বন্দর ছাড়তে হচ্ছে। বিষয়টি আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তারা মন্তব্য করেন।

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখছি। চট্টগ্রাম বন্দরের উৎপাদনশীলতা ধরে রাখতে সব ধরণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ
পরবর্তী নিবন্ধদুদকের মামলায় এস কে সুরের বিচার শুরুর আদেশ