২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে পাঁচ লাখ পর্যটক আসার প্রত্যাশা

দলে দলে বেড়াতে আসছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার | বৃহস্পতিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে লম্বা ছুটির পর বিজয় দিবসকে উপলক্ষ্য করে দেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজারে দলে দলে বেড়াতে আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন। বিজয় দিবসকে ঘিরে মৌসুমের সর্বোচ্চ পর্যটক সমাগম হয়েছে পর্যটনের এই নগরীতে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সেন্টমার্টিন, মহেশখালীসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এসব পর্যটকরা। এতে হোটেলমোটেল, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা জমে উঠেছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, অক্টোবর থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হলেও এতদিন জমে উঠেনি পর্যটন শিল্প। ১ ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু হলেই কক্সবাজারে পর্যটকদের আগমন বাড়ে। সেই সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লম্বা ছুটি এবং বছর শেষে সারা বছরের একঘেয়েমি কাটাতে পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুবান্ধব এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভ্রমণপ্রেমী লোকজন বেড়াতে ছুটে আসছেন কক্সবাজারে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে সর্বোচ্চ পর্যটক অবস্থান করে এবং আগামী শনিবার ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটকে মুখরিত থাকবে এই পর্যটন নগরী। ধারণা করা হচ্ছে, গত তিন দিনে প্রায় তিনি লাখ পর্যটক বেড়াতে এসেছেন এবং আগামী শনিবার পর্যন্ত তা পাঁচ লাখ ছুঁতে পারে!

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, আগত পর্যটকরা পরিবারের সদস্য ও বন্ধুসহকর্মীদেও সাথে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতের লাবণী, কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টে সকাল থেকেই রাত পর্যন্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে সৈকতের লাবণী থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে।

কক্সবাজার হোটেলমোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, গত তিন ধরে সর্বোচ্চ হোটেল কক্ষ বুকিং হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর সব হোটেলমোটেলের শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়। এরপরও আগামী শনিবার পর্যন্ত ৭০ শতাংশ কক্ষ বুকিং থাকতে পারে।

তিনি বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে পর্যটক কম থাকলেও এখন নিয়মিত বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসছেন। আগামী ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্তও বিপুল পর্যটকের আগমণ হবে।’

একই কথা জানিয়ে মেরিনড্রাইভ সড়ক হোটেলমোটেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ‘বেশ পর্যটক এসেছে। এতে পুরো হোটেলমোটেল জোন গমগম করছে। আমরা চেষ্টা করছি, পর্যটকদের সঠিক সেবা দিতে। কোনো পর্যটক যেন হয়রানি না হয় সে ব্যাপারে চেষ্টা করছি।’

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘শহরের তিন শতাধিক রেস্টুরেন্টে পর্যটকদের ভিড় লেগে আছে। এতে ব্যবসায়ীরা বেশ খুশি। খাবারের দাম সহনশীল এবং মান বজায় রাখতে আমরা সব রেস্তোরাঁ মালিকদের নির্দেশ দিয়েছি। এই সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পেলে প্রশাসনকে নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সেন্টমার্টিনে পর্যটক বিচরণের প্রসঙ্গে পযর্টকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন স্কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘সেন্টমার্টিন ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের সীমাহীন চাহিদা। না জেনে কাউন্টারে কাউন্টারে টিকেট খুঁজছে অনেক পর্যটক। কিন্তু দৈনিক দুই হাজার সংখ্যা সীমিত হওয়ায় তাদের অনেকেই যেতে পারছে না। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগেই শতভাগ টিকিট বুকিং হয়ে গেছে। এমনকি জানুয়ারি জন্য প্রায় ৫০ শতাংশ বুকিং হয়ে গেছে।’

তবে অতিরিক্ত খরচ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছু পর্যটকের মধ্যে অসন্তোষও দেখা গেছে। রুম ভাড়া থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বেশি নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অটোরিকশার ভাড়া আর সৈকতে নানারকম উৎপাত রয়েছেএমন দাবি করেছেন অনেক পর্যটক।

কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘পর্যটকদের জন্য হয়রানিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। কোনো অভিযোগ বা সহযোগিতা প্রয়োজন হলে দ্রুত সাড়া দেওয়া হচ্ছে। কোথাও পর্যটকদের কোনো রকম অভিযোগ পাওয়া গেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই!’

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষকের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধপাচারের অর্থ পুনরুদ্ধারে দেশে-বিদেশে ৬৬,১৪৬ কোটি টাকার সম্পদ অবরুদ্ধ