জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আগামী নির্বাচন নিয়ে ধারণা দেওয়ার পরদিন তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে কম সংস্কার হলে তা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে–এমন এক প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনী রোডম্যাপ খুব স্পষ্ট দেওয়া হয়েছে। যদি কম সংস্কার হয় তাহলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে। উনি (প্রধান উপদেষ্টা) একটা আলোকপাত করেছেন। চূড়ান্ত তারিখ কী? সেটা নির্ভর করবে সংস্কারের ওপর। তিনি একটা সময় দিয়ে দিয়েছেন। এর চেয়ে পরিষ্কার রোডম্যাপ কী হতে পারে? আপনি আশা করতে পারেন নির্বাচন হচ্ছে ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে। খবর বিডিনিউজের।
আগের দিন সোমবার বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে ধারণা দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ভোট কবে হবে তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কতটা সংস্কার করে নির্বাচনে যাওয়া হবে, তার ওপর। মোটাদাগে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে হতে পারে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন।
ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার চার মাসের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি বারবার আলোচনায় এসেছে। এ সময়ে সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা, এমনকি সেনাপ্রধানও নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। তবে সেগুলো ছিল তাদের ব্যক্তিগত অভিমত, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এর মধ্যে বিএনপির তরফ থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি তোলা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে গত ১৭ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, সেই ট্রেন আর থামবে না। তবে সেদিন এর আগে রাষ্ট্র সংস্কারে সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন তিনি। এর এক মাসের মাথায় বিজয় দিবসের সকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে প্রথমবারের মতো নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে কথা বললেন ইউনূস।
পরদিন নিয়মিত ব্রিফিংয়ে নির্বাচন বিষয়ক প্রশ্নে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এটা তো স্পষ্ট রোডম্যাপ। এখন আপনি যদি বলেন মনোনয়ন দাখিলের সময় কবে? এ সময় এ বিষয়ে উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ, কবে মনোনয়ন দাখিল হবে এগুলো নির্বাচন কমিশনের কাজ। সরকারের কাজ হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের জাতীয় দাবি আছে রাজনৈতিক দল ও মানুষের পক্ষ থেকে। জুলাই বিপ্লবের চেতনাও হচ্ছে এটা। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভোট দিতে পারে নাই। প্রধান উপদেষ্টার কাছে তরুণদের দাবি তারা যেন ভোট দিতে পারে, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত যেন হয়।
সংস্কার কমিশনগুলো দ্রুত প্রতিবেদন দেবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে জাতীয় উদ্যোগের চেষ্টা হবে। সেই লক্ষ্যে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করারও প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে দিয়েছেন। জাতীয় ঐকমত্যে সংস্কারের বিষয়গুলো তৈরি হয়ে গেলে নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিতে পারবে।
নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ কমিশন শুরু করে দিয়েছে বলে তুলে ধরে উপপ্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনের চূড়ান্ত দিনক্ষণ জানতে হলে সবার উচিত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা। মোটাদাগে সরকার নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমার কথা বলেছেন। এ সময়ে মধ্যে থেকে নির্বাচন আয়োজন করতে গেলে যে যে প্রয়োজনীয়তার কথা ইতিমধ্যে আলোচিত হয়েছে বা এখনো আলোচনা হচ্ছে বা সামনে যে ইস্যুগুলো আসবে সেগুলো নিয়ে সরকার কীভাবে কাজ করবে তার রূপরেখা, পদ্ধতির আউটলাইন প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে ঘোষণা করেছেন।