বিশ্বব্যাপী মার্কেটিং ল্যান্ডস্কেপ ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং ২০২৫ সালেও এর ব্যতিক্রম হবে না। ডিজিটালাইজেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতি, ভোক্তাদের আচরণের পরিবর্তন এবং প্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবন মার্কেটিং কৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। বাংলাদেশও এই পরিবর্তনের অংশীদার, যেখানে অনলাইন ব্যবসা, ই–কমার্স এবং সামাজিক মাধ্যমে মার্কেটিং নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে। চলুন দেখা যাক, ২০২৫ সালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটিং প্রবণতাগুলো কী হতে পারে এবং বাংলাদেশে সেগুলোর কী প্রভাব পড়বে।
১. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক ব্যবহার
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আর কোনো বিলাসিতা নয়; বরং এটি মার্কেটিংয়ের মূল অংশ হয়ে উঠছে। কাস্টমার সাপোর্ট, ব্যক্তিগতকৃত মার্কেটিং, এবং গ্রাহকের তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে কিছু ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম এআই চালিত চ্যাটবট ব্যবহার করছে, যা গ্রাহকদের প্রশ্নের উত্তর দ্রুত দিতে পারে। ভবিষ্যতে এআই–ভিত্তিক কনটেন্ট তৈরি, গ্রাহকের চাহিদা বিশ্লেষণ এবং বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতা পরিমাপে আরও বেশি বিনিয়োগ দেখা যাবে।
২. ভিডিও কনটেন্টের আধিপত্য
ভিডিও কনটেন্টের চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে, এবং এটি ২০২৫ সালেও চলমান থাকবে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেনারেশন ত এবং মিলেনিয়ালরা, শর্ট–ফর্ম ভিডিওর প্রতি বেশি আকৃষ্ট। TikTok, Facebook, Reels, এবং, YouTube, Shorts এখন ব্র্যান্ডগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশি ব্যবসাগুলোকে এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে এবং ইন্টারেক্টিভ ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করতে হবে, যা দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারে।
৩. ব্যক্তিগতকৃত মার্কেটিং কৌশল
বর্তমানে গ্রাহকরা চায় যে ব্র্যান্ড তাদের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী অফার প্রদান করুক। ব্যক্তিগতকৃত মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে ব্র্যান্ডগুলো তাদের গ্রাহকদের আরও বেশি আকৃষ্ট করতে পারবে। বাংলাদেশে ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ডেটা বিশ্লেষণ এবং অও–ভিত্তিক সুপারিশমূলক ইঞ্জিন ব্যবহার করে গ্রাহকের পছন্দের ভিত্তিতে পণ্য সুপারিশ করা শুরু করেছে। ২০২৫ সালে এ প্রবণতা আরও শক্তিশালী হবে, যেখানে গ্রাহকের ব্রাউজিং হিস্ট্রি এবং আগ্রহের ভিত্তিতে ব্যক্তিগত অফার দেওয়া হবে।
৪. সোশ্যাল কমার্সের উত্থান
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরাসরি পণ্য বিক্রির ধারণা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশে ফেসবুক মার্কেটপ্লেস, ইনস্টাগ্রাম শপিং এবং লাইভ সেলিং ট্রেন্ড ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ২০২৫ সালে এই প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পাবে, এবং ছোট–বড় ব্যবসাগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আরও দক্ষতার সাথে পণ্য বিক্রি করবে। লাইভ স্ট্রিমিং কমার্স বিশেষভাবে সফল হবে, যেখানে বিক্রেতারা লাইভে এসে পণ্য প্রদর্শন করবে এবং তাৎক্ষণিক বিক্রয় করবে।
৫. ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন
বিশ্বব্যাপী ভয়েস সার্চের ব্যবহার বাড়ছে, এবং বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার কারণে মানুষ এখন Google Assistant, Siri, এবং Bixby–এর মতো ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য খোঁজে। তাই ব্র্যান্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং কনটেন্ট ভয়েস সার্চের জন্য অপটিমাইজ করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বাংলায় ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন এখনো সীমিত, তবে ২০২৫ সালে এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যেতে পারে।
৬. সাসটেইনেবিলিটি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা
পরিবেশবান্ধব ও সামাজিক দায়বদ্ধ ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ বাড়ছে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম এখন পরিবেশ সচেতন এবং তারা টেকসই ব্যবসাগুলোর প্রতি বেশি আগ্রহী। ২০২৫ সালে বাংলাদেশি ব্র্যান্ডগুলোর জন্য সাসটেইনেবল প্র্যাকটিস গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। প্লাস্টিক মুক্ত প্যাকেজিং, পরিবেশবান্ধব পণ্য, এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা সংক্রান্ত ক্যাম্পেইন ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধি করবে।
৭. ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের বিবর্তন
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বাংলাদেশের মার্কেটিং ল্যান্ডস্কেপে অন্যতম প্রধান প্রবণতা হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালে মাইক্রো ও ন্যানো ইনফ্লুয়েন্সারদের গুরুত্ব আরও বাড়বে। বড় ইনফ্লুয়েন্সারদের চেয়ে কম পরিচিত কিন্তু নির্দিষ্ট কমিউনিটির ওপর বেশি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করা ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বেশি কার্যকর হবে। এ ছাড়া, ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে অরগানিক কনটেন্ট প্রচার আরও জনপ্রিয় হবে।
২০২৫ সালে মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে প্রযুক্তি, গ্রাহকের অভ্যাস এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বিকাশ। বাংলাদেশি ব্র্যান্ডগুলো যদি এই পরিবর্তনগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলে, তবে তারা গ্রাহকদের আরও ভালোভাবে আকৃষ্ট করতে পারবে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে পারবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভিডিও কনটেন্ট, সোশ্যাল কমার্স, এবং সাসটেইনেবিলিটিএ সমস্ত ট্রেন্ড বাংলাদেশের মার্কেটিং জগতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
লেখক: সিনিয়র ম্যানেজার, স্ট্র্যাটেজিক সেলস,
এলিট পেইন্ট এন্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রীজ লি.