২০২৬ সালের জুনে নয়, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি ও এর সমমনা মিত্র দলগুলো। গতকাল শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমন্বয় জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে তারা এ আহ্বান জানান। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা মিত্র দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি।
বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা প্রসঙ্গে জোট নেতাদের কাছে মতামত জানতে যায় বিএনপি। সেখানে এসব জোট ও দলের নেতারা জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনোভাবেই ২০২৫ সাল অতিক্রম করতে পারে না। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশে অস্থিরতা বাড়বে, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা আরও শক্তি সঞ্চয় করে গভীর ষড়যন্ত্র করতে সক্ষম হবে। এতে দেশ ও জাতির বড় ক্ষতি হবে। তাই দেশের বর্তমান পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে মত দেন মিত্র দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।
এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সার্বিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার তারা তা করবে বলেও মত দেন নেতারা। বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও তার প্রেস সচিবের বক্তব্যে পরস্পরবিরোধী উল্লেখ করে এর সমালোচনা করেন নেতারা। তারা বলেন, সরকারের মধ্যেই কোনো সমন্বয় নেই। এতে শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। তাই সরকারের মধ্যে অবশ্যই সমন্বয় থাকা উচিত এবং নির্বাচন ইস্যুকে তাদের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া উচিত। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন– দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু।
জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব উপস্থিত জোট নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশকে নিয়ে দেশি–বিদেশি চক্রান্ত থেমে নেই। চক্রান্তকারীরা যেকোনো উপায়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এমন সময়ে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে সবাইকে আরও কৌশলী হতে হবে, আরও সংযমী হতে হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক বক্তব্য বিবৃতিতে কোনো বিভক্তি আনা যাবে না। এই সরকারকে নির্বাচন আয়োজনের সময় দিতে হবে। তবে সেটা যৌক্তিক হতে হবে। এটা নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিভেদ নয়, আলোচনার টেবিলকেই বেশি প্রাধান্য দিতে হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থা, জনগণের নানা সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে মতবিনিময় করেছি। এই আলোচনার প্রেক্ষিতে কিছু করণীয় সিদ্ধান্ত হলে সেটা আমরা জানাবো। ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতন হয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়নি এখনও।
১২ দলীয় জোটের পক্ষে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন– জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিকল্পধারার নুরুল আমিন বেপারী, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, লেবার পার্টির লায়ন মো. ফারুক রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের অধ্যাপক আবদুল করিম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম ও জাগপার রাশেদ প্রধান। এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটে থাকা ১১টি দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি নেতারা বিএনপির লিয়োজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।
১২ দলীয় জোট প্রধান জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বর্তমানে দেশের উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের আগামী দিনে কর্মসূচি কি হওয়া উচিত, সেসব বিষয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেছি। কিন্তু আমরা কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। বিএনপি, ১২ দলীয় জোটসহ যারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। আমাদের সেই ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি। আগামীতে সেটা আরও গভীরভাবে অনুভূত হবে। বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে খুব শিগগিরই আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করব।