২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরেছে ৮ হাজারের বেশি প্রাণ

যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন

| রবিবার , ৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

গেল বছরে বিভিন্ন যানবাহনের দুর্ঘটনায় রাস্তায় প্রাণ গেছে ৮ হাজার ৫৪৩ জনের। এছাড়া বিদায়ী বছরে রেল ও নৌপথ মিলিয়ে দুর্ঘটনায় মোট ৬৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত বছরে দুর্ঘটনার এই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে। গতকাল শনিবার রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, গেল বছরে ৬ হাজার ৩৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫৪৩ জন নিহত ও ১২ হাজার ৬০৮ জন আহত হয়েছে। এই সময়ে ২ হাজার ৩২৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৫৭০ জন নিহত ও ৩ হাজার ১৫১ জন আহত হয়েছে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৬.৬২ শতাংশ, নিহতের ৩০.০৮ শতাংশ ও আহতের ২৪.৯৯ শতাংশ। খবর বিডিনিউজের।

এছাড়া গেল বছর রেলপথে ৪৯৭টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত, ৩১৫ জন আহত হয়েছে। আর নৌপথে ১১৮টি দুর্ঘটনায় ১৮২ জন নিহত, ২৬৭ জন আহত এবং ১৫৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে মোট ৬ হাজার ৯৭৪টি দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ২৩৭ জন নিহত এবং ১৩ হাজার ১৯০ জন আহত হওয়ার তথ্য এসেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে।

দুর্ঘটনার অর্ধেকই মোটর সাইকেল, নসিমনকরিমন ও ইজিবাইকের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে জানিয়ে মোজাম্মেল বলেন, গত বছরের সংঘটিত দুর্ঘটনায় মোট ৯ হাজার ৭১৭টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে ১৩.৪৫ শতাংশ বাস, ২৩.৩৩ শতাংশ ট্রাকপিকাপকাভার্ডভ্যান ও লরি, .২১ শতাংশ কারজিপমাইক্রোবাস, .৫৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিঙা, ২৭.৪৮ শতাংশ মোটর সাইকেল, ১৬.৫৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, .৩৭ শতাংশ নসিমনকরিমনমাহিন্দ্রাট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দুর্ঘটনা ভয়াবহ বাড়লেও এসব সংবাদ গণমাধ্যমে কম আসায় প্রকৃত চিত্র তুলে আনা যাচ্ছে না বলেও সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

সরকার বদল হলেও পরিবহনের কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন না আসায় দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করে মোজাম্মেল হক বলেন, চাঁদাবাজির হাতবদল হয়েছে কেবল, ফিটনেসহীন যানবাহন সড়কে চলছে, আইনের অপপ্রয়োগ চলছে, বিআরটিএ রাজস্ব আদায়ে ব্যস্ত, ট্রাফিক বিভাগ জরিমানা আদায়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার যাবতীয় উপাদান সড়কে বিছিয়ে রাখা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেবল সভাসমাবেশে, বক্তৃতাবিবৃতি আর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সংবাদ সম্মেলনে ১৩টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো১। মানুষের জীবন রক্ষায় সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা। ২। দ্রুত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করা। ৩। সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্ধ বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে সড়ক নিরাপত্তা উইং চালু করা। ৪। সড়ক নিরাপত্তায় ইতিমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়নে নানা কার্যক্রম শুরু করা। ৫। দেশের সড়কমহাসড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রা ক্রসিং অংকন ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা। ৬। গণপরিবহন চালকদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। ৭। সড়ক পরিবহন সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। অনিয়মদুর্নীতি ও সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা। ৮। গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা। ৯। সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিলে আবেদনের সময়সীমা ৬ মাস বৃদ্ধি করা। ১০। স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দেশব্যাপী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া। ১১। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রাফিক ট্রেনিং একাডেমী গড়ে তোলা। ১২। সড়কের মিডিয়ানে উল্টো পথের আলো এবং পথচারীর পারাপার রোধে মহাসড়কের রোড ডিভাইডার পর্যাপ্ত উচু করা। ১৩। গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণসহ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মালিকশ্রমিকদের সাথে ভুক্তভোগীদের পক্ষে যাত্রী সাধারণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, না পেয়ে কোপানো হলো ব্যবসায়ীকে
পরবর্তী নিবন্ধপ্রত্যাশা অনুযায়ী গাড়ি চলছে না