২০২১ সালে সড়কে ঝরেছে ৭৮০৯ প্রাণ

দুর্ঘটনার যেসব কারণ ও সুপারিশমালা

| সোমবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত বছর ৮৫ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও দেশে ৫ হাজার ৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮০৯ জন নিহত এবং ৯ হাজার ৩৯ জন আহত হয়েছেন বলে উঠে এসেছে এক প্রতিবেদনে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী গতকাল রোববার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের এই বার্ষিক এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন। খবর বিডিনিউজের।

তিনি বলেন, রেলপথে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৩৯৬ জন নিহত, ১৩৪ জন আহত হয়েছেন গতবছর; নৌপথে ১৮২টি দুর্ঘটনায় ৩১১ জন নিহত ও ৫৭৮ জন আহত হয়েছেন, নিখোঁজ হয়েছেন ৫৪৪ জন। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সমিতি। মোজাম্মেল বলেন, সড়ক, রেল, নৌপথে সর্বমোট ৬ হাজার ২১৩টি দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫১৬ জন নিহত এবং ৯ হাজার ৭৫১ জন আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৩৫০ জন চালক, ১ হাজার ৭১৫ জন পথচারী, ১ হাজার ১৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৪৩০ জন ছাত্রছাত্রী, ১১১ জন শিক্ষক, ২৩৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, এক হাজার ৭৬ জন নারী, ৬৩৮ জন শিশু, ৪২ জন সাংবাদিক, ২৭ জন চিকিৎসক, ১৪ জন আইনজীবী ও ১৮ জন প্রকৌশলী এবং ১৬১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা। গত ৭ বছরে ৩৭ হাজার ৪২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১ হাজার ৬৬৫ জন নিহত এবং এক লাখ ৩৯৭ জন আহত হওয়ার তথ্য এসেছে সমিতির প্রতিবেদনে।

দুর্ঘটনার যেসব কারণ বলছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি

বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

এছাড়া সড়কে ছোট যানবাহন বৃদ্ধি, চাঁদাবাজি, রাস্তার পাশে হাটবাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো এবং দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকিইজিবাইকব্যাটাররিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে সমিতি মনে করছে।

সুপারিশমালা

দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতির তরফ থেকে। সেগুলো হলো, সড়ক নিরাপত্তায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা। আইনের ত্রুটি চিহ্নিত ও সংস্কার করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা। সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক মন্ত্রণালয়ে আলাদা সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট গঠন। সড়ক নিরাপত্তায় ইত্যিমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়ন উদ্যোগ নেওয়া। দেশের সড়কমহাসড়কে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রা ক্রসিং দেওয়া। গণপরিবহন চালকদের পেশাদার ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। সড়ক পরিবহন সেক্টরে অনিয়মদুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা। গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা। সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠন করে হতাহতদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। দেশব্যাপী চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেওয়া । ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলা। গণপরিবহনে সেবা ও নিরাপত্তার মান পর্যবেক্ষণের জন্য দেশের সকল মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, জেলা প্রশাসকদের প্রতিমাসে একদিন পরিচয় গোপন রেখে গণপরিবহন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১০১ টাকা কাবিনে রাজ পরীমনির আনুষ্ঠানিক বিয়ে
পরবর্তী নিবন্ধমোবাইল ডেটার প্যাকেজের মেয়াদ নিয়ে প্রশ্ন হাই কোর্টের