২শ বছরের বেশি সময় বাঁচতে পারে বোহেড তিমি, যা অন্য যে–কোনো স্তন্যপায়ীর চেয়ে বেশি। কিন্তু ৮০ টন ওজনের এই বিশাল প্রাণী এত দীর্ঘ সময় কীভাবে সুস্থভাবে বেঁচে থাকে তা বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্য। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান লিখেছে, এখন এ রহস্যের কিছু সূত্র খুঁজে পেয়েছেন এবং তা নিয়ে পরীক্ষা করছেন বিজ্ঞানীরা। তারা খতিয়ে দেখছেন মানুষের শরীরেও এই একই জৈবিক প্রক্রিয়া কাজে লাগানো সম্ভব কিনা। খবর বিডিনিউজের।
গবেষকরা বলছেন, এমনটি সম্ভব হলে মানুষের সুস্থভাবে দীর্ঘায়ু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি এবং অস্ত্রোপচার বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সময় শরীরের অঙ্গ ও টিস্যুকে সুরক্ষিত রাখতেও সহায়ক হতে পারে। নিউ ইয়র্কের ইউনিভার্সিটি অফ রচেস্টারের জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক ভেরা গর্বুনোভা বলেছেন, আমরা বোহেড তিমির অসাধারণ দীর্ঘায়ুর রহস্য জানতে চেয়েছি, যা পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘজীবী স্তন্যপায়ী প্রাণী। এর একটি কারণ হতে পারে, এদের শরীরে ডিএনএর ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অংশকে অত্যন্ত নিখুঁত ও কার্যকরভাবে সারাতে পারে কোষ।
সব প্রাণেরই ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন কোষ সেইসব ক্ষতি সারানোর চেষ্টা করে। তবে সবসময় সফল হয় না। ফলে ধীরে ধীরে কোষে পরিবর্তন বা মিউটেশন জমতে থাকে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় এবং কোষ ও টিস্যুর কাজের সক্ষমতা নষ্ট করে বার্ধক্যকে বাড়িয়ে দেয়।
গর্বুনোভা ও তার সহকর্মীরা বলছেন, বোহেড তিমিরা এদের ডিএনএর এক বিশেষ ধরনের ক্ষতি, যেখানে ডিএনএর ডাবল হেলিক্স বা দ্বি–সূত্র বিশিষ্ট গঠনের দুটি সূত্রই ভেঙে যায়, তা সারাতে দক্ষ। ফলে এদের শরীরে খুব কম সংখ্যক জিনগত পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটে। গর্বুনোভা বলেছেন, এ ধরনের সারানো প্রক্রিয়া দীর্ঘ জীবনধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিমির কোষে ধারাবাহিক পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা দেখেছেন, ‘সিআইআরবিপি’ নামে এক প্রোটিন ডিএনএ সারানোর কার্যকারিতা বাড়ায়। এ প্রোটিনটি ঠান্ডার সংস্পর্শে সক্রিয় হয়। বোহেড তিমি জীবনের পুরোটা সময় আর্কটিকের বরফ ঠান্ডা পানিতে বাস করে এবং এরা মানুষের তুলনায় প্রায় একশ গুণ বেশি সিআইআরবিপি প্রোটিন তৈরি করে।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’–এ। গবেষণাপত্রে গবেষকরা লিখেছেন, এ প্রক্রিয়াটি ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন কোষকে ধ্বংস না করে সেগুলোকে সঠিকভাবে সারায়। সম্ভবত এ কারণেই বোহেড তিমিরা এত দীর্ঘজীবী ও এদের মধ্যে ক্যানসারের হার এত কম।
এরপর গবেষক দলটি পরীক্ষা করে দেখেছেন, মানুষের কোষে যদি সিআইআরবিপি প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ানো যায় তাহলে কী ঘটে। ফলাফলে উঠে এসেছে, প্রোটিনের মাত্রা বাড়ালে কোষের ডিএনএর দ্বি–সূত্র ভেঙে তা সারানোর সক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। পরবর্তী পরীক্ষায় মাছির ওপর এ নিয়ে গবেষণা করেন গবেষকরা। এতে উঠে এসেছে, অতিরিক্ত সিআইআরবিপি এদের আয়ু বাড়ায় ও বিকিরণ বা রেডিয়েশনজনিত মিউটেশন বা জিনগত পরিবর্তনের ক্ষতি থেকে আরো বেশি সুরক্ষা দেয়।
গর্বুনোভা বলেছেন, আমরা বলতে পারি, এক্ষেত্রে মানুষের জন্য উন্নতির সুযোগ রয়েছে। আগে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন, ডিএনএ সারানোর এ পদ্ধতির আর উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ আমাদের ডিএনএ সারানোর প্রক্রিয়া সেরা। তবে এক্ষেত্রে আমাদের চেয়েও ভালো উদাহরণ বোহেড তিমি।
এ তিমির দীর্ঘায়ুতে ডিএনএ সারানোর ভূমিকা কতটা বড় তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে গবেষকরা এখন ইঁদুরের ওপর সিআইআরবিপি নিয়ে পরীক্ষা করছেন, যাতে এরা কতদিন বাঁচে তা জানা যায়। ঠান্ডা পানিতে সাঁতার কাটা বা ঠান্ডা শাওয়ার নেয়া মানুষের শরীরে প্রোটিনের মাত্রা বাড়ায় কিনা এবং সেই বৃদ্ধির প্রভাব কতক্ষণ স্থায়ী থাকে তা নিয়েও পরীক্ষা চলছে।
গর্বুনোভা বলেছেন, আমরা জানার চেষ্টা করছি শরীরকে কিছুক্ষণ ঠান্ডার সংস্পর্শে রাখলে সিআইআরবিপি প্রোটিন বাড়ানো সম্ভব, নাকি এর জন্য আরো কিছু বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন। পাশাপাশি ওষুধ বা অন্য কোনো চিকিৎসা উপায়ও খুঁজছি, যা একই প্রভাব দেবে। কারণ সবাই ঠান্ডা পানিতে সাঁতার কাটা বা ঠান্ডা শাওয়ার নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।
        











