২শ ফুটের ব্রিজ পার হতে লাগে দুই ঘণ্টা!

যানজটে ম্লান কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে আনন্দ ভ্রমণ

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার | সোমবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারটেকনাফ সমুদ্র সৈকতের তীর ধরে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেরিন ড্রাইভের আনন্দ ভ্রমণ এখন রেজু ব্রিজের যানজটে ম্লান। প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক ভ্রমণে সময় লাগার কথা এক থেকে সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টা। কিন্তু রেজু নদীর উপর নির্মিত ২শ ফুটের ব্রিজ পার হতেই এখন সময় লাগছে দুই ঘণ্টা! এতে হাজার হাজার পর্যটকের পাশাপাশি স্থানীয়রাও চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালের ৬ মে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কক্সবাজারটেকনাফ মেরিন ড্রাইভের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সড়কে রামু, উখিয়া ও টেকনাফের একাংশের বাসিন্দারাসহ প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক চলাচল করেন। শরণার্থী মিশনের সাথে জড়িত দেশীবিদেশী কয়েক হাজার কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীও নিয়মিত মেরিন ড্রাইভ ব্যবহার করছে। কিন্তু ১৯৯৫ সালে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের প্রাক্কালে এ সড়কের রামুউখিয়া সীমান্তবর্তী রেজু নদীর উপর নির্মিত একমুখী যান চলাচলের উক্ত বেইলি ব্রিজটির পরিবর্তে নতুন কোনো পিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি। ফলে একমুখী যান চলাচলের কারণে রেজু ব্রিজের দুই প্রান্তে প্রায়শঃ দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। আর এ যানজট পরিস্থিতিকে আরো প্রকট করে তুলেছে ব্রিজের উত্তরপূর্ব প্রান্তে স্থাপিত যৌথ বাহিনীর চেকপোস্ট। প্রধানত, এ দুটি কারণে ব্রিজের দুই প্রান্তে দীর্ঘ যানজট লাগছে বলে মনে করেন উখিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা রাসেল চৌধুরী।

তিনি বলেন, বিশেষ করে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে যখন পর্যটকের চাপ থাকে তখন রেজু ব্রিজের দুই প্রান্তে ২০/২২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানবাহনের জটও লেগে যায়। আর সেই যানজট স্বাভাবিক হতে সময় লাগে দুইআড়াইঘণ্টাও।

ঈদের ছুটিতে এই যানজট ৫/৬ ঘণ্টার বেশিও হয় বলে জানান কক্সবাজারের বিশিষ্ট ঠিকাদার আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গত ঈদের সময় রেজু ব্রিজে ৫ ঘণ্টা ধরে যানজটে আটকে থাকার পর ইনানীটেকনাফ না গিয়ে পুনরায় শহরে ফিরে আসি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের বিচকর্মী সুপারভাইজার মাহবুব আলম জানান, সম্প্রতি মেরিন ড্রাইভে চালু হওয়া দোতলা ট্যুরিস্ট বাসে করে প্রায়শ তিনি ইনানী ও টেকনাফে যাতায়াত করেন। কিন্তু ব্রিজের এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে যেতে সময় লাগছে ১ থেকে ২ ঘণ্টা। আর গত বৃহস্পতিবারশুক্রবার ও শনিবার সন্ধ্যার সময় রেজু ব্রিজ পার হতেই সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। এতে পর্যটকেরা খুবই বিরক্তবোধ করছেন এবং মেরিন ড্রাইভের আনন্দ ভ্রমণ রেজু ব্রিজের যানজটে ম্লান হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

তবে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এ নদীর উপর একটি ফোরলেন বিশিষ্ট পিসি গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান।

তিনি বলেন, এই সড়কের কক্সবাজার শহর থেকে উখিয়ার পাটুয়ারটেক পর্যন্ত ৩০ দশমিক ৪০ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করার কাজও শুরু হবে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৮ জুন মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ‘কক্সবাজারটেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রশস্তকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথমধাপে এক হাজার ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সড়কের কক্সবাজার শহর থেকে উখিয়ার পাটুয়ারটেক পর্যন্ত ৩০ দশমিক ৪০ কিলোমিটার রাস্তা ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত করা, রেজু খালের ওপর বিদ্যমান লোহার সংকীর্ণ সেতুটি আরো প্রশস্ত করে ১০ দশমিক ২৫ মিটারে (দুই লেন) উন্নীত করা এবং মেরিন ড্রাইভে নিরাপত্তা রক্ষায় ৬০৮টি সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

২০২২ সালের জুলাই হতে ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা। তবে সম্প্রতি রেজু ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হলেও এখনও সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপেটে ডিম নিয়ে সৈকতে ভেসে এলো আরও ৪টি মৃত মা কাছিম
পরবর্তী নিবন্ধখেলাপি ঋণ অবলোপন ২ বছরেই, ভবিষ্যতে ‘বিক্রিও’ করা যাবে