২০২৪ সালের ১ আগস্ট (৩২ জুলাই) বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচিতেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আবার কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কয়েকটি স্থানে বেশকিছু শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন ১৬ জুলাই সংঘর্ষে রূপ নেয় এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে ‘জুলাই গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এরপর ২১ জুলাই, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দিলেও ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। আন্দোলনকারীরা তখন জানায়, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জুলাই মাস চলতেই থাকবে। ফলে তারা ১ আগস্টকে ৩২ জুলাই, ২ আগস্টকে ৩৩ জুলাই হিসেবে গণনা শুরু করেন।
৩২ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে এসব কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি কোথাও কোথাও শিক্ষক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। এর আগে বুধবার রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে বলা হয়, নির্যাতনের ভয়ংকর দিন–রাতের স্মৃতিচারণ, নিহত ও আহতদের নিয়ে পরিবার ও সহপাঠীদের স্মৃতিচারণ এবং আন্দোলন ঘিরে নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে চিত্রাঙ্কন বা গ্রাফিতি, দেয়াল লিখন, ফেস্টুন তৈরি ইত্যাদির মাধ্যমে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। সব শ্রেণি–পেশার মানুষকে অনলাইন ও অফলাইনে এ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেফতার সবার স্মরণে আগামীকাল (২ আগস্ট/৩৩ জুলাই) দেশব্যাপী ‘প্রার্থনা ও ছাত্র–জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, জাতির এই দুর্দিনে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেপ্তার হওয়া সবার স্মরণে শুক্রবার দেশব্যাপী ‘প্রার্থনা ও ছাত্র–জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করছি। গণহত্যা ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২ আগস্ট শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে দোয়া, শহীদদের কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা ও ছাত্র–জনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
শ্রমিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী, আলেম–ওলামাসহ বাংলাদেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের ‘প্রার্থনা ও ছাত্র–জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।
এইদিন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কে মুক্তি দেওয়া হয়। ১ আগস্ট দুপুর দেড়টার দিকে তারা ডিবি কার্যালয় থেকে গাড়িতে করে বের হয়ে যান। ওই সময় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বাবা বদরুল ইসলাম জানান, ভোর ৬টায় সবার বাসায় ফোন দিয়ে ডিবি অফিসে আসতে বলা হয়। পরে দুপুর দেড়টার দিকে ডিবি কার্যালয়ের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় তাদেরকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। তারা দুই দিন ডিবি অফিসে অনশন করেছে। তারা এখন শারীরিকভাবে বিপর্যস্থ বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত ২৬ জুলাই ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে ডিবি পুলিশ জোরপূর্বক মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে আসে। মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ হাসপাতালে চিকিৎসারত ছিলেন। ২৭ জুলাই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে সায়েন্স ল্যাব থেকে জোরপূর্বক ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে আসা হয়। ২৮ জুলাই সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে ভোররাতে বাসা ভেঙে জোরপূর্বক ডিবি অফিসে নিয়ে আসা হয়।