১৯ বেসরকারি আইসিডিতে চার্জ বাড়ল গড়ে ৫০ শতাংশ

কন্টেনার হ্যান্ডলিং চার্জ বৃদ্ধির কারণে রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা ডলারের দামের সাথে সমন্বয় করায় প্রভাব ফেলবে না : বিকডা

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ

বন্দর কর্তৃপক্ষের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে বেসরকারি কন্টেনার ডিপোগুলো গড়ে ৫০ শতাংশ চার্জ বাড়িয়েছে। ডিপোতে কন্টেনার হ্যান্ডলিং চার্জ বৃদ্ধির কারণে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) দেশের ১৯টি বেসরকারি কন্টেনার ডিপোতে বিভিন্ন সেবার চার্জ ১ সেপ্টেম্বর থেকে বৃদ্ধি করেছে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ায় রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, এক লাফে গড়ে ৫০ শতাংশ চার্জ বৃদ্ধির কারণে বিদেশি বায়াররা বাংলাদেশ বিমুখ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মূল্যায়ন কমিটি বা কোনো স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বিকডা এক তরফাভাবে ট্যারিফ বাড়িয়ে দিয়েছে। অবশ্য বিকডার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যথেষ্ট যৌক্তিক কারণেই ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে। এর কোনো বিকল্প ছিল না। তাছাড়া এই ট্যারিফ বৃদ্ধি দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের কোন ক্ষতি হবে না, বিদেশের আমদানিকারকই ট্যারিফ পরিশোধ করবে। ডলারের দামের সাথে সমন্বয় করায় এই চার্জ কোন প্রভাব ফেলবে না বলেও বিকডা মন্তব্য করেছে।

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯টি বেসরকারি আইসিডি গড়ে তোলা হয়েছে। এসব আইসিডিতে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং কিংবা গতিশীলতা এসব আইসিডির কার্যক্রমের উপর বহুলাংশে নির্ভর করে। বেসরকারি আইসিডিগুলোতে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় দ্বিগুণ কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে যে, চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনার ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার টিইইউএসের কাছাকাছি, অথচ বেসরকারি আইসিডিগুলোর ধারণক্ষমতা এক লাখ ছয় হাজার টিইইউএস। বেসরকারি আইসিডিগুলোতে বছরে প্রায় ২২ লাখ কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়। এসব আইসিডিতে রপ্তানির সব পণ্যই কন্টেনারজাত করে জাহাজীকরণের জন্য বন্দরে পাঠানো হয়।

অপরদিকে বন্দরের ইয়ার্ডে নামা ৬৫ ধরনের আমদানি পণ্য চলে যায় এসব আইসিডিতে, যেখান থেকে খালাস করা হয়। ফলে এ খাতের ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি দেশের আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে পড়বে।

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া নতুন ট্যারিফ অনুযায়ী ২০ ফুটি একটি কন্টেনারের প্যাকেজ চার্জ ৬ হাজার ১২৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ৯০০ টাকা করা হয়েছে, যা প্রায় ৬২ শতাংশ বেশি। ৪০ ফুটি কন্টেরারের চার্জ ৮ হাজার ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩ হাজার ২০০ টাকা, ৪০ ফুটি হাইকিউব কন্টেনারের চার্জ ৮ হাজার ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৪ হাজার ৯০০ টাকা করা হয়েছে। পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জিওএইচ কার্গোর চার্জও বাড়ানো হয়েছে, যেখানে ২০ ফুটি কন্টেনারের জন্য ১১ হাজার ৯০০ টাকা, ৪০ ফুটি কন্টেনারের জন্য ১৫ হাজার ২০০ টাকা এবং হাইকিউব কন্টেনারের জন্য ১৬ হাজার ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রেফার কনটেইনারের প্লাগইন চার্জ ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে। ডকুমেন্টশন চার্জ ২৭৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫০ টাকা, ২০ ফুটি খালি কন্টেনার পরিবহন ১৭০৫ থেকে বাড়িয়ে ২৫০০ টাকা, সিএফএস স্টোরেজ প্রতিদিন ২৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা করা হয়েছে। ভিজিএম চার্জ আগে ছিল না, নয়া ট্যারিফে ১৭২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চার্জ বৃদ্ধির ফলে রপ্তানি বাণিজ্যে মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারকেরা বলেছেন, এর ফলে বিদেশি বায়ারেরা বাংলাদেশের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

চার্জ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে চট্টগ্রামের একাধিক আইসিডি মালিক বলেছেন, চার্জ বাড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোন অপশন ছিলো না। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে আমাদের বেশ বেকায়দায় ফেলে। শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ, প্রচুর খরচ, অথচ অস্থিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে উঠছিল। তারা বলেন, শিপিং এজেন্টরা তাদের বিল পান ডলারে, আমরা চার্জ নিই দেশীয় মুদ্রায়, টাকায়। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের সমন্বয় করতেই চার্জ বৃদ্ধি করতে হয়েছে।

এই বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বলেছেন, চার্জ বাড়ানোর একটি নিয়ম কানুন আছে। আইসিডিগুলোতে কিভাবে চার্জ বাড়ানো হবে তার জন্য একটি কমিটি আছে। কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে তারা এক তরফাভাবে চার্জ বাড়িয়ে দিয়েছে। মূল্যায়ন কমিটি কিংবা স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বিন্দুমাত্র আলোচনাও তারা করেনি। বন্দরের সাথেও কোন আলোচনা হয়নি। অনেকটা জোর করে চার্জ বাড়ানো হয়েছে। চার্জ বাড়ানোর এই ধাক্কা দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের সামলাতে হিমশিম খেতে হবে বলেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, চার্জ বৃদ্ধির ব্যাপারে সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে আলোচনা করা দরকার ছিল। সেটা হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে আলোচনার একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি হয়নি।

বন্দর কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে চার্জ বৃদ্ধি যাতে না করে সেই ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছিলেন। সেটাও হয়নি। এভাবে জোর করে চার্জ বাড়িয়ে বিকডা দেশের ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে ফেললেন। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩০ বছর পর হবে সিঙ্গাপুর, সাংহাই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে আশিক চৌধুরী
পরবর্তী নিবন্ধস্বপ্নের স্মৃতিচারণ, ভালোবাসায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়