১৮ হাজার টাকার স্ক্র্যাপ ডাকাতি করতে ‘পাহারাদার’ খুন

গ্রেপ্তার ১০ জন, আদালতে একজনের স্বীকারোক্তি

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করে কারখানায় নেওয়ার পথে প্রতিনিয়ত গাড়ি আটকিয়ে রড তৈরির কাঁচামাল- স্ক্র্যাপ ডাকাতির ঘটনা নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে পুলিশ স্ক্র্যাপ ডাকাতি চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করলেও আইনি ফাঁকফোকরে জামিনে বেরিয়ে পুনরায় তারা ডাকাতিতে নেমে পড়ে। ডাকাতদের উৎপাতে অতিষ্ঠ রড উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি গাড়িতে ‘পাহারাদার’ নিয়োগ করতে বাধ্য হয়। এ ধরণের এক ঘটনায় আবুল হাসেম নিরব (১৯) নামে এক পাহারাদারকে প্রাণ দিতে হয়েছে। পাষণ্ড ডাকাতেরা স্ক্র্যাপ ডাকাতি করতে একজন জীবন্ত মানুষকে খুন করে পালিয়ে যায়। আর ডাকাতি করে নিয়ে যায় ৩০০ কেজি স্ক্র্যাপ। যার মূল্য মাত্র ১৮ হাজার টাকা। গত ৬ সেপ্টেম্বর রাত তিনটার দিকে সীতাকুণ্ড থানাধীন শীতলপুরে অবস্থিত আবুল খায়ের স্টিল মিলের কারখানায় স্ক্র্যাপবাহী ডাম্পার ট্রাকে নিহতের লাশ পাওয়া যায়। এর আগে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের গ্লাসকো গেটের পশ্চিম পাশে ও সিটি গেটের উত্তর পাশে খাজা মোটরস নামক দোকানের সামনে ৩৫ টন লোহা পরিবহনকারী ডাম্পার ট্রাকটিতে পাথর নিক্ষেপ করে ট্রাকটি থামাতে বাধ্য করে ৭-৮ জনের ডাকাতদল। এসময় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ট্রাক থেকে ৩০০ কেজি স্ক্র্যাপ লুটে করে নেয় ডাকাতেরা। এ সময় গাড়িতে থাকা পাহারাদার তাদের বাধা দিলে তাকে শ্বাসরোধ করে নিস্তেজ করে লোহা নিয়ে সটকে পড়ে। এ ঘটনায় ৭ সেপ্টেম্বর আকবার শাহ থানায় দণ্ডবিধির ৩৯৬ ধারায় (ডাকাতি করতে গিয়ে খুন) মামলা দায়ের হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ৬ সেপ্টেম্বর রাত তিনটার দিকে নগরীর সদরঘাটের জুটর‌্যালি ঘাট থেকে স্ক্র্যাপ বোঝাই করে শীতলপুর কারখানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় ‘চট্টমেট্রো-ট-১১-৬৮৭৯’ নম্বরের ডাম্পার ট্রাকটি। ট্রাকটিতে পাহারাদারের দায়িত্বে ছিলেন নিরব। সিটি গেট এলাকায় ট্রাকে স্ক্র্যাপ ডাকাতি করার সময় বাধা দিলে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে ডাকাতেরা।
এদিকে খুনের ঘটনায় পুলিশ গত দুইদিনে নগরীর পাহাড়তলী, খুলশী, হালিশহর, বন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত ১০জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মো. রকি (২২), মো. রাসেল আখন (২৭), মো. আবদুল্লাহ ওরফে আবদুল ওরফে লাইল্যা (২০), মো. রানা ওরফে পারভেজ (১৯), মো. ইব্রাহিম ওরফে শান্ত (২০), মো. আবদুর রায়হান ওরফে রায়হান (১৯), মোহাম্মদ আলী ওরফে রমজান ওরফে রানা (২০), মো. আবদুল জলিল (৬২), মো. মজিবুর রহমান ওরফে রিপন (৩০) এবং মো. সাজ্জাদ (৩০)। এসময় আসামিদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি ম্যাঙ্মিা অটো টেম্পু, দুইটি ফোল্ডিং ছাকু, লুণ্ঠিত ৩০০ কেজি স্ক্র্যাপ, দুইটি ত্রিপল উদ্ধার করে পুলিশ। তন্মধ্যে ধৃত আসামি মো. রকি গতকাল বৃহস্পতিবার মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এ বিষয়ে আকবর শাহ থানার ওসি মোহাম্মদ জহির হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানিকৃত স্ক্র্যাপ কারখানায় নেওয়ার পথে সিটি গেট এলাকায় গাড়ি থামিয়ে একটি ট্রাক থেকে লোহা লুঠ করে নেয় ডাকাতেরা। পরে ট্রাকটি শীতলপুর গেলে গাড়িতে মৃত অবস্থায় পাহারাদার নিরবের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আমরা ১০জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত স্ক্র্যাপ উদ্ধার, ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি ম্যাঙ্মিা গাড়ি ও দুইটি চাকু উদ্ধার করেছি। তন্মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা শ্বাসরোধ করে ওই পাহারাদারকে হত্যা করেছে।
ওসি বলেন, ঢাকা- চট্টগ্রাম মহামড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং এসব ফুটেজ পর্যালোচনা করে আমরা ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করেছি। মূলত ডাকাতের দল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত বিভিন্ন লোহা ও লোহা তৈরির কাঁচামাল বোঝাইকৃত মালামাল ট্রাককে সিএনজি ও ম্যাঙ্মিা গাড়িযোগে অনুসরণ করে গাড়িতে উঠে মালামাল লুণ্ঠন করে। এসব চোরাই ও লুটকৃত স্ক্র্যাপ এবং মালামাল চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোর্ট হিল পরিদর্শনে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক
পরবর্তী নিবন্ধছয় ওষুধের দোকানকে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা