১৮ মার্চ থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত মালিকদের

বেতন-ভাতা ও মজুরি নিয়ে বিরোধ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৭ মার্চ, ২০২৩ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

আগামী ১৮ মার্চ থেকে সারা দেশে নৌযান চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে করে দেশব্যাপী পণ্য এবং যাত্রী পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।

অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে চলাচলকারী লাইটারেজ এবং যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত জাহাজের বেতনভাতা ও মজুরি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে গতকাল সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাহাজ মালিকদের এক বৈঠক থেকে সারাদেশে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে শ্রম দপ্তর থেকে দেয়া মূল বেতনের ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা না হলে মালিকপক্ষ আর জাহাজ চালাবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। সূত্র জানায়, নৌযান শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ত্রিপক্ষীয় এক বৈঠক থেকে শ্রমিকদের মজুরি মূল বেতনের ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় সরকারের শ্রম দপ্তর। শ্রম দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শ্রম বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ, নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়, লাইটারেজ জাহাজ মালিকপক্ষ, ডব্লিউটিসি এবং বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। টানা প্রায় ৬ ঘন্টা ধরে চলা শ্রম সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শ্রমিকদের মজুরি বেসিকের উপর ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেয়া হলে মালিক পক্ষ অস্বীকৃতি জানিয়ে বেরিয়ে আসেন। তারা কোনো অবস্থাতেই এই সিদ্ধান্ত মানা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। কিন্তু ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেপরবর্তীতে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

কিন্তু জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে শ্রম, জ্বালানি এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়। বলা হয় ইতোপূর্বে মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনার পর শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে শ্রম সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একতরফাভাবে ৬০ শতাংশ মজুরি বাড়ানো হয়েছে। এই মজুরি প্রদান কোনভাবেই সম্ভব নয় বলে দাবি করে জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে তিনটি মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর উপস্থিতিতে বৈঠক এবং আলোচনার দাবি জানানো হয়। একইসাথে চট্টগ্রাম থেকে পণ্যবাহী সব জাহাজ ডব্লিউটিসির সিরিয়ালভুক্ত হয়ে চলাচল এবং জ্বালানি তেলের ভুর্তকি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো মেনে নেয়া হলে শ্রমিক মজুরি বাড়ানোর ব্যাপারটি চিন্তা করা হবে বলেও মালিকপক্ষ গতকাল পুনরায় ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অব্দি ঢাকার রাজারবাগস্থ পার্টি হাউজে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে ১৮ মার্চ থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌরুটে সব ধরণের জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে ঢাকা চট্টগ্রাম এবং খুলনা অঞ্চলের জাহাজ মালিকেরা যোগ দেন। চট্টগ্রামের জাহাজ মালিকদের নেতা শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর গতকালের বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করে বলেছেন, শ্রম দপ্তর থেকে যেভাবে বেতনভাতা কিংবা মজুরি বাড়ানো হয়েছে তা প্রদান করা সম্ভব নয়। তিনি আমদানি কমে যাওয়ায় জাহাজ মালিকদের দেউলিয়া হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, জাহাজের কোনো ভাড়া নেই। শত শত জাহাজ নদীতে অলস ভাসছে। এই অবস্থায় বেতনমজুরি বাড়ানোর অর্থ হচ্ছে পুরো সেক্টরটিকে ধ্বংস করে ফেলা। এটা মেনে নেয়া কোনভাবেই সম্ভব নয় বলে বৈঠকে জাহাজ মালিকেরা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্রয়লার মুরগির দামে রেকর্ড
পরবর্তী নিবন্ধসাকিবের জাদুতে এড়াল হোয়াইটওয়াশ