দেশকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে নিতে যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা এখনো সঠিকভাবে সেই কাজটা করতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে মাঝে মাঝে বিভিন্ন রকমের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে সমস্যাগুলো শেখ হাসিনার প্রেতাত্মাদের আরো শক্তিশালী করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছে, কিন্তু তার প্রেতাত্মারা এখনো আছে। তারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশে আবারও তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু তরুণদের সামনে তারা টিকতে পারবে না। তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।
গতকাল শনিবার নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠিত ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’–এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সঞ্চালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির।
বিকাল ৩টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তীব্র রোদ উপেক্ষা করে ২টা থেকে সভাস্থলে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও কুমিল্লা থেকেও আসেন অনেকে। বিকাল ৩টা হতেই পুরো মাঠ ভরে যায়। সিআরবিসহ আশেপাশেও ছড়িয়ে পড়ে লোকজন। বিভিন্ন জায়গা থেকে সমাবেশস্থলে আসা নেতাকর্মীদের বহনকারী গাড়ির কারণে ওয়াসা থেকে লালখান বাজার হয়ে টাইগারপাস পর্যন্ত যান চলাচল ধীর হয়ে যায়। এদিকে সভায় আগতদের মাঝে অনেকে পানিও বিতরণ করেন।
১৮ কোটি মানুষ দেখতে চায় না আওয়ামী লীগকে : দেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখতে চায় না দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে যখন আপনাদের একটি সভা হচ্ছে, ঠিক একই সময়ে আপনাদের নিউ মার্কেট এলাকায় (চট্টগ্রামের) আরেক সভা হচ্ছে, ঢাকায়ও হচ্ছে। তাদের একটাই দাবি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আমরা যারা এই মাঠে আছি শুধু তারা নয়, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ এই আওয়ামী লীগকে দেখতে চায় না। কারণ এই আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়ে এসেছে। তারা গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে। চারটি পত্রিকা ছাড়া সব বন্ধ করে দিয়েছিল, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা সেদিন ছিল না। অর্থনীতি বন্ধ করে দিয়েছিল।
জুলাই আন্দোলনে চট্টগ্রামে নিহত ছাত্রদল নেতা শহীদ ওয়াসিম আকরামের নাম পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৬ জুলাই ওয়াসিম আকরাম শহীদ হয়েছেন। এই সরকার যখন পাঠ্যপুস্তকে সাঈদ–মুগ্ধের নাম তুলেছে আমরা খুব খুশি হয়েছি। কিন্তু সেখানে যখন ওয়াসিমের নাম দেখিনি আমরা দুঃখ পেয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার অবিলম্বে এটা সংশোধন করে ওয়াসিমের নামও সেখানে যুক্ত করবে।
তিনি বলেন, সংস্কার সংস্কার কথা বলেন। আরে প্রথম সংস্কার করেছেন জিয়াউর রহমান। একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছেন। সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দিয়েছেন। অর্থনীতিকে মুক্ত করেছেন। আজকের অর্থনীতির যে ভিত্তি, গার্মেন্টস সেক্টর এবং বিদেশে মানুষ পাঠানো, সেটাও শুরু করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর বেগম জিয়া ৯টি বছর পথেঘাটে ঘুরে বেরিয়ে এরশাদকে পরাজিত করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। তিনি পার্লামেন্টে ডেমোক্রেসি দিয়েছেন। একইসঙ্গে কেয়ারটেকার ব্যবস্থা এনেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, কিছু কিছু মানুষ সব ভুলে যায়। সব ভুলিয়ে দিতে চায়। মনে করে যে তারা বাইরে লেখাপড়া শিখে এসে আমাদের সামনে কিছু সুন্দর সুন্দর মুখরোচক কথা বললেই বোধ হয় জাতি সব ভুলে যাবে। তাদের বলব, দয়া করে আজকের সমাবেশটা দেখে যান। এটা দেখেও যদি আপনাদের সম্বিৎ ফিরে আসে তাহলে জাতি উপকৃত হবে।
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়। তারা অধিকার প্রয়োগ করতে চায়। আমাদের তরুণরা ব্যবসা চায়, চাকরি চায়, কর্মসংস্থান চায়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চমৎকার বিদ্যাপীঠে পরিণত করতে চায়। সত্যিকার অর্থে শান্তিময় একটা রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। একটা গণতান্ত্রিক দেশ চায়, যে যার কথা বলবে। এবং সেটা সহনশীলতা এবং একটা ঐক্যের মাধ্যমে হবে। আমরা সে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
তিনি বলেন, আজকে তারুণ্যের সমাবেশের একটা উদ্দেশ্য, তরুণরা আবার জেগে উঠেছেন। আপনারা ফ্যাসিস্টকে পরাজিত করেছেন, আপনারাই তাকে দেশের বাইরে পাঠিয়েছেন। সেই তরুণরা আবারো জেগে ওঠেন। আপনার অধিকার জোর করে কেড়ে নিন। মাথা ঠান্ডা রেখে, সজাগ থেকে সমস্ত চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করেছিলেন একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য। খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা জন্য আপোষহীন মনোভাব নিয়ে কাজ করেছেন। তারেক রহমান নতুন করে তারুণ্যকে শিক্ষা দিচ্ছেন, আসুন আমরা সত্যিকার অর্থে আধুনিক বিশ্বের উপযোগী বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে আমরা কোনো কিছু করতে দিব না। বাংলাদেশের প্রশ্নে আমরা আপোষহীন। এজন্য তারেক রহমান বলেছেন সবার আগে বাংলাদেশ। তিনি বলেছিলেন ফয়সালা হবে রাজপথে, সেটাই হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ চাই। যেখানে মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে, মাথা উঁচু থাকবে দেশের। বাংলাদেশের পতাকাটা উড়বে পতপত করে।
আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেন, আজকের তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশের হাল ধরবে। এই তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেই বিএনপির রাজনীতি।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ইয়াছিন আলী, যুবদলের সহসভাপতি রেজাউল করিম, জুলাই আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামের পিতা শফিউল আলম। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ভিপি হারুন অর রশিদ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু, জাতীয়তাবাদী পাটকল শ্রমিক দলের সভাপতি সাঈদ আল নোমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী।