১৮ কিমি প্রশস্তকরণে পার ১৭ মাস

বারইয়ারহাট-রামগড় সড়ক

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | শনিবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

রামগড় স্থলবন্দর হয়ে ভারত থেকে সড়ক পথে পণ্য রপ্তানি আমদানির জন্য ৩৮ কিলোমিটারের বারইয়ারহাটহেঁয়াকোরামগড় সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ ১৭ মাসে ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের বাকি ৬০ শতাংশ কাজ শেষ করতে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী। সড়কটি লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) মাধ্যমে প্রশস্তকরণ করা হচ্ছে। গত বছরের জুন মাস থেকে ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়ে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা আর হচ্ছে না। বর্তমানে প্রকল্পের ৪০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মীরসরাইয়ের বারইয়ারহাটহেঁয়াকোরামগড় সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি ভারত সরকারের এলওসি৩ এবং বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে ব্যায় ধরা হয়েছে প্রায় ১২শ ২৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল দিল্লিতে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এই প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার দেবে ৬শ ৩২ কোটি টাকা। অন্যদিকে ৫শ ৯৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ঋণ দেবে ভারত সরকার। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ২৪৯.২০ মিটারের ৯টি সেতু ও ১০৮ মিটারের ২৩টি কালভার্ট ও ৩৮ ফুট প্রস্থের ৩৮ কিলোমিটার সড়ক। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরত্বে রামগড় স্থলবন্দরটি ব্যবহার করে মাত্র ৩ ঘন্টায় পণ্য যাবে ভারতে। এর আগে অন্য একটি প্রকল্পে বারইয়ারহাটহেঁয়াকোরামগড় সড়কে ২৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে জাইকার অর্থায়নে রামগড় থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত ১৬টি ব্রিজ ও কালভার্টের কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিপিসিএল। ব্রিজ ছাড়াও ব্রিজের পাশে ২০০ থেকে ৩০০ মিটার এপ্যোচ সড়ক নির্মাণ করে তারা।

জানা গেছে, ২০২৩ সালে ২৪ মে বারইয়ারহাটহেঁয়াকোরামগড় সড়ক প্রশস্থ করণের কাজ ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ২০২৩ সালের জুন মাসে ব্রিজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তবে গত বছরের জুনজুলাইয়ে প্রচুর বৃষ্টি থাকায় কাজের অগ্রগতি তেমন হয়নি। দেড় বছর মেয়াদের এই প্রকল্পে কাজ আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটা সম্ভব নয়। তাই আগামী ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত সময় চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম বিভাগ। সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শেষ হলে রামগড় স্থলবন্দর ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টায় ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য যাবে ভারতে। গতি পাবে আমদানি রপ্তানিতে। মীরসরাইসোনাগাজী ও সীতাকুন্ডে অবস্থিত মীরসরাই শিল্পনগরে উৎপাদিত পণ্য খুব সহজে ভারতে রপ্তানি করা যাবে। সড়কটি প্রশস্তকরণের কাজ পেয়েছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অশোকা বিল্ডকন লিমিটেড। রামগড়ের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে ইতোমধ্যে মীরসরাই ফটিকছড়িসহ উত্তর চট্টগ্রামের সড়ক ব্যবস্থাপনায় এসেছে বৈপ্লবিক উন্নয়ন। এছাড়া মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের নানা কর্মকাণ্ডে বারইয়ারহাটহেঁয়াকোরামগড় সড়ক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এই বিষয়ে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ ফারহান বলেন, গত ১৭ মাসে প্রকল্পের মোট অগ্রগতি হয়েছে ৪০ শতাংশ। ৩৮ কিলোমিটারের মধ্যে ১৮ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। তবে ৫ আগস্টের পর বালু সংকট থাকায় কাজের কিছুটা ধীরগতি আসে। এখন পুরোদমে কাজ চলছে।

সরেজমিনে মীরসরাইয়ের বারইয়ারহাট ও করেরহাট অংশে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বারইয়ারহাট, করেরহাট, হেঁয়াকোসহ বিভিন্ন অংশে আংশিক সড়কে কার্পেটিং করা হয়েছে। জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত ১৭ মাসে প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। তবে সেটি এখনো অনুমোদন হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৩৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৮ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে নারীকে কুপিয়ে হত্যা ও চুরির ঘটনায় আটক ১
পরবর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত