শ্রমিকদের ১৮টি ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানিয়ে আজ বুধবার থেকে তাদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি হুঁশিয়ার দিয়েছেন, এরপর কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে সরকার তা বরদাশত করবে না।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকার, বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে তিনি এ কথা বলেন। আসিফ মাহমুদ বলেন, আমি আহ্বান জানাতে চাই, আপনাদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে। আর যে দাবিগুলো শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মেনে নেওয়া যায়, সেই দাবিগুলো মেনে নেব খুব দ্রুতই। আপনাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, দেশের শিল্পকে বাঁচানোর জন্য দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য যে নতুন বাংলাদেশ আমরা অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি, তাকে সমুন্নত রাখা এবং সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনারা স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরে যাবেন। খবর বিডিনিউজের।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, মালিক পক্ষ, শ্রমিক পক্ষ এবং সরকার পক্ষের মধ্যে বারবার আলোচনা হচ্ছে, দীর্ঘ এক মাস ধরে আলোচনা, দাবি–দাওয়ার ভিত্তিতে যে মূল দাবি ১৮টা, আমরা আইডেন্টিফাই করেছি। সেই ১৮ দাবির বিষয়ে মালিক পক্ষ এবং শ্রমিক পক্ষ মিলে একটা সমাধানে পৌঁছানো গেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই দাবিগুলো সমাধানের দিকে আমরা আগাব। যেগুলো সমাধান সম্ভব সেগুলো আজকে ইমিডিয়েটলি সমাধান করে দিয়েছি এবং যেগুলো দুই পক্ষের বৈঠকের মধ্যে সমাধান হবে, সেগুলো শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে হবে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা চলমান থাকবে।
আজ বুধবার থেকে সব কারখানা চালু রাখার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের শিল্পকারখানা যাতে বাঁচে, শিল্প যাতে হাতছাড়া না হয় সেজন্য শ্রমিক, মালিক, সরকার সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান থাকবে, আপনারা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন। যদি শিল্প না বাঁচে তাহলে শ্রমিকও বাঁচবে না, সরকারেরও প্রয়োজন হবে না এবং মালিকও বাঁচবে না। আমাদের শিল্পকে বাঁচাতে হবে, আমাদের শিল্প যাতে হাতে থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। মালিকদের প্রতি আহ্বান থাকবে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন খুব দ্রুত পরিশোধ করার ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, আগামীকাল (আজ) থেকে এই দাবিগুলো মেনে নেয়ার প্রেক্ষিতে যদি কোনো পক্ষ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে, সেটা যদি কোনো মালিক পক্ষ বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ প্রকাশ করে এবং সদিচ্ছার অভাব থাকে এবং শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেটার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিল্প সচল দেখতে চাই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ একটা আলোচনার পর আমরা একটা সমঝোতায় পৌঁছেছি। এখন এই সমঝোতা স্মারকে আমার মালিকপক্ষ স্বাক্ষর করেছে, আমার শ্রমিক ভাই–বোন স্বাক্ষর করেছে। এখন এই যে সমঝোতা চুক্তিটা বা স্মারক যেটাই বলেন না কেন, এটা আমরা সবাই মেনে চলব, এটা আমাদের সবাইকে অঙ্গীকার করতে হবে। এবং এই সমঝোতা চুক্তি থেকে আমাদের কিন্তু পিছু হটার কোনো কারণ নাই।
তিনি বলেন, এটা থেকে কেউ কোনো বাহানা দিয়ে নড়তে পারবেন না। আবারও বলছি, আগামীকাল (আজ) থেকে দেখতে চাই, এই শিল্পটা সচল। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন উস্কানির মাধ্যমে এই শিল্পটাকে নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়; এটা শুধু দেশে না, বাইরে থেকেও।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো অবস্থাতেই নিজেদের হাতে নিবেন না। আগামীকাল থেকে আশা করব, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যেন শিল্প এলাকায় না হয়। যদি আগামীকাল থেকে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, এর জন্য আপনারা যারা স্বাক্ষর করেছেন, আপনারাই দায়ী হবেন।
শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিউজ্জামান জানান, দেশে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ১৮টি দাবি মেনে নিয়েছে মালিকপক্ষ। এসব দাবির মধ্যে আছে টিফিন বিল দেওয়া, ১০ অক্টোবরের মধ্যে সব কারখানায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন, শ্রমঘন এলাকায় টিসিবি ও ওএমএসের মাধ্যমে রেশন প্রদান, শ্রমিকদের আগের বকেয়া ১০ অক্টোবরের মধ্যে পরিশোধ, শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্তি বন্ধে নজরদারি, ঝুট ব্যবসা নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বা চাঁদাবাজি বন্ধে নজরদারি, ন্যূনতম মজুরি আন্দোলনসহ নানা সময়ের মামলা প্রত্যাহার, নিয়োগে ক্ষেত্রে নারী–পুরুষের বৈষম্য দূর করা, জুলাই আন্দোলনে নিহতদের ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা করা, রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনের বিষয়ে কমিটি গঠন, সব কারখানায় ডে–কেয়ার সেন্টার নিশ্চিত করা, অন্যায্যভাবে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা, নারী কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন, শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে কাজ করা, প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু করা এবং বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট চালু করা।
সচিব বলেন, শ্রমিকপক্ষের ৩৫ জন প্রতিনিধি ছিল, মালিক পক্ষ ছিল। তাদের ১৮টি দাবিতে একমত পোষণ করেছি। কাল (আজ) থেকে সমস্ত ইন্ডাস্ট্রি নির্বিঘ্নে চলবে।