২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য উন্নয়ন ও পরিচালন মিলিয়ে ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৭১৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। যা সরকারের বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটের ৩ দশমিক ৩ গুণ বেশি। সরকারের উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয় বাজেটের বর্তমান অনুপাত যেখানে ৩৮:৬২, সেখানে সমিতির এবারের বিকল্প বাজেটে তা ৬৯:৩১। এছাড়া বিশাল আকারের এ বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ বিকল্প বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন গতকাল ১ জুন বিকাল ৩টার দিকে। ‘কোভিড-১৯ ও আর্থ-সামাজিক মন্দা থেকে উত্তরণে বিকল্প বাজেট: ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাব’ শীর্ষক বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।
সমিতির এবারের বিকল্প বাজেটে বলা হয়, সামাজিক মন্দা থেকে করোনার অভিঘাত মোকাবেলা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের আয় বাড়াতে হবে। সম্ভাব্য কীভাবে তা বাড়তে পারে, তা নিয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ২৮টি নতুন উৎসের কথা বলেছে। অর্থমন্ত্রীর পেশকৃত চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মোট রাজস্ব ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৩ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরে এ আয় ৩ দশমিক ৩ গুণ বেশি বৃদ্ধি করে ১৭ লক্ষ ৩৮ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা প্রস্তাব করেছে। সুযোগ থাকার পরও সরকার নজর না দেয়া তিনটি খাত- অতিরিক্ত মুনাফা, কালো টাকা ও অর্থ পাচার থেকে সমিতি সবচেয়ে বেশি আয় (৪ লক্ষ ৪৩ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা) দেখিয়েছে।
সমাজ ও অর্থনীতির কোন কোন খাত ও ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে এবং পেছনের যুক্তি কী তা তুলে ধরে সমিতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে বলেছে, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ২ লাখ ২ হাজার ১২৪ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১২৪ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পরিচালন বরাদ্দ দিয়ে ‘গণপরিবহণ ও গবেষণা ও বিচ্ছুরণ’ নামে দুটি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ২ লাখ ২৬ হাজার ১১৪ কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, আমাদের প্রস্তাবনায় বাজেটের ব্যয় বরাদ্দ কাঠামোতে গুণগত রূপান্তর ঘটবে। উন্নয়ন বাজেট হবে পরিচালন বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি, যা এখন ঠিক উল্টো। এখন উন্নয়ন-পরিচালন বাজেট বরাদ্দের অনুপাত ৩৮:৬২, যা আমাদের প্রস্তাবিত বাজেটে হবে ৬৯:৩১। চলতি অর্থবছরে সরকারের মোট আয় (প্রাপ্তি) ছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৩ কোটি টাকা। পক্ষান্তরে বিকল্প বাজেটে এ প্রাপ্তি প্রস্তাব করা হয়েছে ১৬ লাখ ৩ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ে প্রত্যক্ষ কর অনুপাত ৪৮: ৫২ শতাংশের বিপরীতে সমিতির বাজেটে তা ৮৪: ১৬ শতাংশ।
সমিতির বাজেটে নতুন খাত/ উপখাত সংযোজন করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো দুটি মন্ত্রণালয় গণপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং গবেষণা ও বিচ্ছুরণ মন্ত্রণালয়। ১০টি নতুন বিভাগের অন্যতম হলো- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা বিভাগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রবীণ হিতৈষী বিভাগ, দরিদ্র-বিত্তহীন-নিম্নবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জীবন কুশলতা উন্নয়ন বিভাগ, গ্রামীণ নারী-দরিদ্র-বিত্তহীন-নিম্নবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত নারীপ্রধান খানার জীবন কুশলতা উন্নয়ন বিভাগ।
আবুল বারকাত তার বিকল্প বাজেটে ধনীদের ওপর অধিক কর আরোপের প্রস্তাব করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ছয়টি প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে রয়েছে- ধনী-বিত্তশালীদের ওপর সম্পদ কর আরোপ করা, সুপার-ডুপার ধনীদের ক্ষেত্রে কর হার বাড়ানো, শেয়ারবাজার ও বন্ডবাজারে বড় বিনিয়োগের ওপর সম্পদ কর আরোপ করা, অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর আরোপ করা, কালো টাকা বাজেয়াপ্ত ও উদ্ধার করা এবং পাচার করা অর্থ উদ্ধার করা।
অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ২০১৫ সাল থেকে এ বিকল্প বাজেট দিয়ে আসছি, এটা আমাদের সপ্তম বাজেট। আশা করি সরকার আমাদের এ বাজেট প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখবে।
এ অনলাইন বাজেট সম্মেলনে চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক ব্যাংকার এটিএম কামরুদ্দিন চৌধুরী তাহের, সহ-সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক মো. খোরশেদ আলম, সহ-সম্পাদক অধ্যাপক বিদ্যুৎ কান্তি নাথ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনছুর এম ওয়াই চৌধুরী। এছাড়া অনলাইনে যুক্ত ছিলেন চ্যাপ্টারের সভাপতি প্রফেসর ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ একেএম ইসমাইল, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক জহিরুল হক স্বপন, কোষাধক্ষ বনফুল গ্রুপের জিএম শাহ কামাল মোস্তফা, সদস্য ব্যাংকার এস এম আবু জাকের। এ সম্মেলনে সারাদেশের ৬৪টি জেলা ও উপজেলা হতে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির প্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ব্যক্তিবর্গ যুক্ত হন।