১৭ বছর পর মুক্ত বাবর

কারাগার থেকে সোজা জিয়ার কবরে, কাঁদলেন অঝোরে

| শুক্রবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

বিভিন্ন মামলায় দণ্ড মাথায় নিয়ে টানা ১৭ বছর কারাগারের চার দেয়ালের ঘেরাটোপে ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর, সেই বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে সোজা চলে গেলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর প্রাঙ্গণে। সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর। হাত তুলে নেতাকর্মীদের অভিবাদনের সাড়া দেন। জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা জানানোর পর বনানীতে মাবাবার কবর জিয়ারত করে অসুস্থ বাবর রওনা হন গুলশানের বাসার দিকে।

সব মামলায় খালাস পাওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কেরানীগঞ্জের ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে সহকারী কারা মহাপরিদর্শক জান্নাত উল ফরহাদ জানান। তিনি বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ না থাকায় কারাবিধি অনুযায়ী তিনি পৌনে ২টার দিকে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।

নেত্রকোণা৪ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্যের মুক্তির খবরে বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকেই ভিড় করেছিলেন কারাগারের বাইরে। লুৎফুজ্জামান বাবরের স্বজনরাও এসেছিলেন। মুক্তি পাওয়ার পর গলায় ফুলের মালা পরা বাবরকে হুডখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়তে দেখা যায়। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ২৮ মে লুৎফুজ্জামান বাবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। জরুরি অবস্থার সেই দুই বছর এবং পরে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে কয়েকটি মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড হয়, একটিতে হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আপিল শুনানি শেষে একে একে এসব মামলায় খালাস পান বাবর। গত ২৩ অক্টোবর দুর্নীতির এক মামলায় ৮ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পান বাবর। ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আসামি বাবরসহ সব আসামিকে গত ১ ডিসেম্বর খালাস দেয় হাই কোর্ট। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলাতেও বাবরের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। আর অস্ত্র আইনের পৃথক মামলায় হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। গত ১৮ ডিসেম্বর ও ১৪ জানুয়ারি আপিলের রায়ে হাই কোর্ট দুই মামলাতেই বাবরকে খালাস দিলে তার মুক্তির পথ খোলে।

কারাগার থেকে সোজা জিয়ার কবরে : বৃহস্পতিবার তার মুক্তি ঘিরে কেরাণীগঞ্জ কারাগারের সামনে আগে থেকেই জড়ো হয়েছিলেন পরিবারের সদস্যসহ হাজারো নেতাকর্মী। বেলা পৌনে ২টায় কারাগার থেকে বের হলে নেতাকর্মীদের নিয়েই তার গাড়িবহর চলে যায় শেরে বাংলা নগরে। এতে তার সময় লেগে যায় তিন ঘণ্টা। কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান পরে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের অত্যন্ত প্রিয় সহকর্মী যিনি ১৭ বছরের বেশি সময় কারাগারের অন্ধকুঠিরে জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং যিনি উচ্চ আদালতের রায়ে নিরাপরাধ প্রমাণিত হয়ে মুক্ত হয়েছেন। আমাদের সেই প্রিয় সহকর্মী লুৎফুজ্জামান বাবরকে নিয়ে আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন সাবেক সিইউএফএল মহাব্যবস্থাপক
পরবর্তী নিবন্ধউত্তেজনাপূর্ণ ৯৬ ঘণ্টা পর গাজা চুক্তি