আরো একবার টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে নিল ভারত। ১৭ বছর পর এ ফরমেটে দ্বিতীয়বারের মতো তারা চ্যাম্পিয়ন হলো। ২০০৭ সালে প্রথম আসরের পর আরেকবার। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলেন রোহিত শর্মারা। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারায় ভারত। প্রথমে ব্যাট করে ভারত ৭ উইকেটে ১৭৬ রান সংগ্রহ করে। জবাবে প্রোটিয়াদের ইনিংস শেষ হয় ৮ উইকেটে ১৬৯ রানে। গতকাল রাতে বার্বাডোজে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ভারতের করা ১৭৬ রান ছিল টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের সর্বোচ্চ রান। এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার করা ১৭৩ রান ছিল সর্বোচ্চ। গত ১২ মাসে ভারত তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে। টেস্ট, এক দিনের ক্রিকেটের লড়াইয়ে হারলেও টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বজয় করেন রোহিতরা। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চোকার্সই থেকে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। মূলত হার্দিক পান্ডিয়ার হাত ধরে হারের মুখ থেকে জয় ছিনিয়ে নেন রোহিতরা। বাউন্ডারি লাইনে ডেভিড মিলারের ক্যাচ দুর্দান্ত ভাবে ধরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারের দরজা দেখিয়ে দেন সূর্যকুমার যাদবও। শেষ তিন ওভারে ম্যাচের রং বদলে যায় সম্পূর্ণ। রোহিতদের হার না মানা মানসিকতার সামনে স্বপ্নভঙ্গ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার।
জয়ের জন্য ১৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই জোড়া উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকাও। রেজা হেনড্রিকসকে (৪) আউট করেন যশপ্রীত বুমরা। এডেন মার্করামকে ফেরান (৪) আর্শদীপ সিংহ। ১২ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলের ইনিংসের হাল ধরেন কুইন্টন ডিকক এবং ট্রিস্টান স্টাবস। তৃতীয় উইকেটে তাদের জুটির সাবলীল ব্যাটিং কিছুটা চাপে ফেলে দেয় রোহিতদের। এ জুটি ভাঙেন অক্ষর। স্টাবস আউট হন ২১ বলে ৩১ রান করে। ৩টি চার এবং ১টি ছয় হাঁকান তিনি। তার পর ডিককের সঙ্গে জুটি বাঁধেন হেনরিক ক্লাসেন। দক্ষিণ আফ্রিকার রান তোলার গতি আটকাতে পারেননি ভারতীয় বোলাররা। ডিকককে আউট করেন আর্শদীপ। তার ৩১ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে রয়েছে ৪টি চার এবং ১টি ছক্কা। তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি। ক্লাসেনের আগ্রাসী ব্যাটিং ভারতকে চাপে রাখে। শেষ পর্যন্ত হার্দিক তাকে আউট করলে আবার লড়াইয়ে ফেরে ভারত। ক্লাসেন করেন ২৭ বলে ৫২ রান। ক্লাসেন আউট হতে পাল্টা চাপে পড়ে যায় প্রোটিয়ারা। জানসেনও (২) দলকে ভরসা দিতে পারেননি। তিনি আউট হন বুমরার বলে। পর পর ২ উইকেট হারানোর পর ডেভিড মিলার এবং মহারাজ চাপ সামলাতে পারেননি। বুমরা, আর্শদীপদের বল মোকাবেলা করতে পারেননি তারা। ছয় মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে সূর্যকুমারের হাতে ধরা পড়েন মরিয়া মিলার। অবাক করা ক্যাচ নেন সূর্যকুমার। এই উইকেটই ভারতের জয় এক রকম নিশ্চিত করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ১৬৯ রানের বেশি করতে পারেনি প্রোটিয়ারা। অথচ ১৬ ওভার পর্যন্ত ম্যাচ জেতার দৌড়ে সুবিধাজনক জায়গায় ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের সফলতম বোলার হার্দিক ২০ রানে ৩ উইকেট নেন। ১৮ রানে ২ উইকেট বুমরার। ২০ রানে ২ উইকেট আর্শদীপের। ৪৯ রানে ১ উইকেট অক্ষরের। ফাইনালে ৪৫ রান খরচ করলেও উইকেটহীন থাকতে হয় কুলদীপ যাদবকে।
এর আগে বার্বাডোজে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভারত ভালোই শুরু করে। প্রথম আট বলের পাঁচটিতেই বাউন্ডারি পায়। মার্কো জানসেনের করা প্রথম ওভারে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান বিরাট কোহলি, আসে ১৫ রান। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে সবচেয়ে খরুচে প্রথম ওভার করেন জানসেন। পরের ওভারে স্পিনার কেশব মহারাজকে নিয়ে আসেন প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। তাকে প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকান রোহিত। এক বল ডট দেওয়ার পরেরটিতেই উইকেট এনে দেন মহারাজ। তাকে সুইপ করতে গেলে বল কিছুটা শূন্যে ভেসেছিল, স্কয়ার লেগে নিচু হওয়া ক্যাচ দারুণভাবে নেন হেনরিখ ক্লাসেন। ৫ বলে ৯ রান করে ফিরতে হয় অধিনায়ক রোহিতকে। মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলে আউট হয়ে যান রিশভ পান্তও। সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটের আগায় লেগে বল উপরে উঠে যায়। সহজ ক্যাচ নেন কুইন্টন ডি কক। ২ বলে শূন্য রান করে আউট হন পান্ত। ভালো শুরুর পর হুট করে খেই হারায় ভারত। তাদের বিপদ আরও বাড়ে পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে সূর্যকুমার যাদব আউট হলে। কাগিসো রাবাদার বলে ফাইন লেগে তার ক্যাচ নেন ক্লাসেন। ৪ বলে ৩ রান করে ফেরত যান সূর্য। এরপর পাঁচে অক্ষর প্যাটেলকে পাঠায় ভারত। তাদের এই কৌশল কাজে লাগে ভালোভাবেই। বিরাট কোহলিকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস টানেন অক্ষর। সুযোগ পেলেই ছক্কা হাঁকিয়ে রানের চাকাও সচল রাখেন। কোহলির সঙ্গে তার জুটি ছাড়িয়ে যায় পঞ্চাশ রান। কিন্তু নিজের হাফ সেঞ্চুরি ছুঁতে পারেননি তিনি। হয়ে যান রান আউট। উইকেটরক্ষকের জায়গা থেকে সরাসরি থ্রোতে নন স্ট্রাইক প্রান্তে স্টাম্প ভাঙেন ডি কক। ৩১ বলে ১টি চার ও চারটি ছক্কায় ৪৭ রান করে সাজঘরে ফেরত যান অক্ষর। তার বিদায়ের পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কোহলি। এই টুর্নামেন্টে প্রথমবার এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। আগের সাত ইনিংসে স্রেফ ৭৫ রান করেছিলেন, দুবার আউট হয়েছিলেন শূন্য রানে। ফাইনালে ৪৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন কোহলি। ফিফটি পাওয়ার পর কিছুটা চালিয়ে খেলার চেষ্টা করেন কোহলি। হাফ সেঞ্চুরি পাওয়ার পরের ১১ বলে ১৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে। মার্কো জানসেনের আগের বলে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। পরেরটি একটু স্লো করেন তিনি। এবার পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন রাবাদার হাতে। ৫৯ বলে ৭৬ রান করেন কোহলি ৬টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে। কোহলির সঙ্গে পরে পঞ্চাশ পেরোনো জুটি হয়েছিল দুবেরও। ইনিংসের দুই বল বাকি থাকতে আউট হন দুবে। ১৬ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৭ রান করে আউট হন দুবে। শেষ বলে জাদেজাও আউট হলে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ এ থামে ভারত। হার্দিক পান্ডিয়া অপরাজিত থাকেন ৫ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার কেশব মহারাজ ২৩ রানে ২ উইকেট নেন। ২৬ রানে ২ উইকেট অনরিখ নরখিয়া। এছাড়া ৩৬ রানে ১ উইকেট কাগিসো রাবাদার এবং মার্কো জানসেন ১ উইকেট পান ৪৯ রান খরচ করে। ম্যাচ সেরা হন বিরাট কোহলি। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হন জাসপ্রিত বুমরা।