গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামীকে গত ৪ নভেম্বর শোকজ করে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যের প্রমাণসহ ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য তিনদিনের সময় দেওয়া হয় ওই চিঠিতে। পরবর্তীতে আরও সাতদিনের সময় চেয়ে রেজিস্ট্রারকে পাল্টা চিঠি দেন প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী। এরপর গতকাল রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) বরাবর ১৭ পৃষ্ঠার লিখিত একটি ব্যাখ্যা প্রদান করেন হেলাল নিজামী। এতে তিনি প্রত্যেকটি কথার ব্যাখ্যা ও নানা যুক্তি উপস্থাপন করেন।
অপরদিকে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অতিরিক্ত সময় নিয়েও আদতে কোন প্রমাণ দিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান। তিনি বলেন, প্রথমত উনি উত্তর দেবার জন্য ৩ দিনের জায়গায় ১০দিন সময় নিয়েছেন। এখন বলছেন প্রমাণ দিতে বাধ্য নন। উনি কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। দুর্নীতির কোন প্রমাণ নেই বলেই বিভিন্ন মীমাংসিত বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যার প্রমাণ প্রশাসনের হাতে আছে। উনি মূলত স্ববিরোধী বক্তব্যই দিয়েছেন।
লিখিত ব্যাখ্যার প্রমাণ স্বরূপ আরেকটি সংযুক্তি প্রদান করেন। রেজিস্ট্রার বরাবর দেয়া সেই ব্যাখ্যার দুইটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে আছে। চিঠিতে হেলাল নিজামী প্রথমে উল্লেখ করেন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বিবৃতি প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র প্রফেসর ও একটি অনুষদের ডিনকে উপাচার্য কর্তৃক ব্যাখ্যা তলবের নামে নোটিশ প্রদান কার্যত আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। তিনি বলেন, নোটিশে যিনি (উপাচার্য) অভিযোগকারী, তিনিই বিচারক। কাজেই তাঁর কর্তৃত্ব এক্ষেত্রে সীমিত।
এটি অজ্ঞতাপ্রসূত ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণে ব্যর্থতা বলে প্রতীয়মান হয়। তিনি লিখেন, আমি প্রশাসনকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলছি, এটার জন্য আমার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। প্রথমত এটার ব্যাখ্যা দিতে আমি বাধ্য নই। আর তারা দুর্নীতি করছে না সেটা প্রমাণ করার দায়িত্ব তাদের উপর বর্তায়। এরপর তিনি তাঁর বক্তব্যের আলোকে কিছু ব্যাখ্যা ও প্রমাণ তুলে ধরেন। এরপর তিনি ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন’ বক্তব্যের ব্যাখায় ৯টি পয়েন্ট উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের তিন বছরের মধ্যে তিনি সিনেটে রেজিস্ট্রার গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন, সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন ও সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন দিতে পারেননি। আইনের শাসনে বিশ্বাসী কেউ এমনটা করতে পারেন না। বক্তব্যের বাকি দুইটি বাক্যের ব্যাখ্যাও দেন তিনি।
মূলত এর আগে গত ৩ নভেম্বর চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও ডিনদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন ও সমাবর্তন নিয়ে নিয়ে বৈঠকে বসেন। আলোচনার এক পর্যায়ে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী সিন্ডিকেট নির্বাচন নিয়ে কথা তুলেন। এ নিয়ে উপাচার্য প্রফেসর শিরীণ আখতারের সঙ্গে হেলাল নিজামীর বাকবিতণ্ডা হয়। এর পরেরদিন বৈঠকে বাকবিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে বক্তব্যের প্রমাণসহ ব্যাখ্যা চেয়ে তিন দিনের সময় দিয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়। এরপর ১০ নভেম্বর আরও সাত কর্মদিবসের সময় চেয়ে পাল্টা চিঠি হেলাল নিজামী।