১৭ দিনে সড়কে ঝরল চার প্রাণ, আহত অর্ধ শতাধিক

রাঙ্গুনিয়ায় বেপরোয়া মোটরসাইকেল

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৬ মার্চ, ২০২১ at ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় মাত্র ১৭ দিনের ব্যবধানে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৪ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক মানুষ। মৃত্যুর ঘটনার ৪টির মধ্যে তিনটিই দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের কারণে হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় ৫টি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে। সড়কে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, সড়ক দখল করে অবৈধ স্টেন্ড ও স্থাপনা, অদক্ষ গাড়ির চালক, সড়কের বিপদজ্জনক মোড়সহ বিভিন্ন কারণে রাঙ্গুনিয়ায় দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা বেড়েই চলছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার গোচরা বাজারে দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মারা গেছে আশরাফুল হাছান আইমান (১২) নামে এক শিশু। আইমান বাজার নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক পার হতে গিয়েই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ড লস্কর তালুকদার বাড়ি এলাকার আবদুল সোবহানের ছেলে। গতকাল শুক্রবার সকালে নামাজের জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। এর আগে গত ৩ মার্চ সকালে রেনুরা বেগম (৬০) নামে এক নারী বিধবা ভাতার জন্য একাউন্ট খুলতে যাচ্ছিলেন। তিনি উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের রাণীরহাট ঠান্ডাছড়ি এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা থেকে নেমে সড়ক পার হচ্ছিলেন। এসময় রাঙামাটিগামী দ্রুতগতির একটি প্রাইভেট কার চাপায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। নিহত রেনুরা বেগম স্থানীয় তাইজুল ইসলামের স্ত্রী। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে দাওয়াত খেয়ে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন মো. মামুন (২৪) ও তার মামাতো ভাই মো. আবদুল্লাহ (২১)। পথে কাপ্তাই সড়কের ইছাখালী জেলেপাড়া এলাকায় এলে দ্রুতগতির একটি প্রাইভেট কারের সাথে তাদের মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক মামুনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরেরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবদুল্লাহ।
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনের ওষুধ দোকানি মো. ইসকান্দর বলেন, শুধুমাত্র হাসপাতালের সামনেই গত এক ১৫ দিনে অন্তত ৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। দ্রুতগতির যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে সড়কে গতিরোধক না থাকায় গাড়ির ধাক্কায় সড়ক পার হতে গিয়ে পথচারীরা এসব দুর্ঘটনার মুখে পড়ছেন বলে তিনি জানান। এভাবে সড়কে ১৭ দিনের ব্যবধানে ঝরলো ৪ প্রাণ, আহত হয়েছেন আরও অর্ধ শতাধিক মানুষ।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ উপসহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা সৈয়দ রবিউল হোসেন জানায়, প্রায় প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও গুরুতর আহত রোগীরা আসেন। বিভিন্নভাবে আহত হয়ে গত ১ মাসে ১৯২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে আনুমানিক ১১০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন।
সরেজমিনে ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়াতে সড়কের তুলনায় মোটরযানের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। একই সড়কে চলছে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, রিকশাসহ নানা রকম মিশ্র যানবাহন। উপরন্তু সড়কগুলো ত্রুটিপূর্ণ। সড়কের অনেক স্থানেই রয়েছে বিপজ্জনক বাঁক। এসব বাঁকের কারণে প্রায়শই সেসব জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা ব্যাপক আকার ধারণ করার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লাইসেন্স বিহীন পরিবহন, অদক্ষ চালক, মোটরসাইকেলের আধিক্য, চালকের অসতর্কতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো। এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় প্রতিকার ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মাহবুব মিল্কি জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় গত এক মাসে ৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। সড়কে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, ওভারটেক করার মানসিকতাসহ নানা কারণে দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সড়কে পশর মনিটরিং বাড়িয়ে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে এক দিনে ৬৩৫ রোগী শনাক্ত
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমুদ্র কর্তৃপক্ষের সদস্য নির্বাচিত