বুকের ধন ইয়াছিন আরাফাতকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন নগরীর আগ্রাবাদের রঙ্গীপাড়ার নাসরিন আক্তার। চারদিকে থৈ থৈ পানির মাঝে ঘরের জিনিসপত্র সামলানোর সময় অগোচরে দেড় বছরের শিশুটি ঘরের সামনে নালায় পড়ে নিখোঁজ হয়। প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর গতকাল সকালে নালা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর থেকে ক্রমাগত বিলাপ করছেন জননী। পিতা সাদ্দাম হোসেনও শোকে কাহিল হয়ে গেছেন। গতকাল শিশুটির লাশ স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কার চালক সাদ্দাম হোসেন এবং গৃহিণী নাসরিন আক্তারের একমাত্র সন্তান ইয়াছিন আরাফাত। দেড় বছরের শিশুটি মায়ের চোখের মনি ছিল। তুমুল বর্ষণে নগরীর নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেলে নাসরিনের বাসায়ও পানি ঢুকে পড়ে। এই সময় বিছানার উপর শিশুটিকে শুইয়ে দিয়ে নাসরিন আক্তার বানের পানি থেকে ঘরের জিনিসপত্র সামলানোর চেষ্টা করছিলেন। ইয়াছিন আরাফাত খাট থেকে একবার নেমে বাইরে পানির দিকে চলে যায়। মা দেখতে পেয়ে তাকে ধরে এনে কাপড় পাল্টে আবারো বিছানার উপর তুলে দেয় এবং তাকে পানিও খাইয়ে দেয়। কে জানতো যে, ওই পানিই তার জীবনে মায়ের হাতের শেষ পানি হবে। মা ধারণা করছিলেন, বাচ্চার তৃষ্ণা লেগেছে। তাই পানি খেতে বাইরের পানির দিকে ছুটছে। কিন্তু বাচ্চাটি যে পানিতে খেলার জন্য এমন করে বিছানা থেকে নেমে যাচ্ছে সেটি মা বুঝতে পারেননি। মা আবারো নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেন। শিশুটি তার অগোছরে বিছানার উপর থেকে নেমে পড়ে। একপর্যায়ে মায়ের খেয়াল হয় যে, শিশুটি খাটের উপর নেই। তখন চারদিকে খুঁজতে গিয়ে তিনি আর তাকে পাননি।
নিখোঁজের ১৭ ঘণ্টা পর গতকাল সোমবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কর্মীরা ঘরের অদূরে নালা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। এ সময় গাউসিয়া কমিটির কর্মীরাও উদ্ধার কাজে অংশ নেন।
ধারণা করা হচ্ছে যে, শিশুটি খাট থেকে নেমে হেঁটে সামনের দিকে যায় এবং স্ল্যাপ থেকে পড়ে নালায় ডুবে যায়। গতকাল সকালে শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, মায়ের অগোছরে শিশুটি নালায় পড়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে মারা গেছে। তিনি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।