১৬ মাসের মধ্যে চলেছে দুই মাস

শিক্ষার্থীদের জন্য বিআরটিসির দশ বাস

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২ নভেম্বর, ২০২০ at ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ

১৬ মাসের মধ্যে ১৪ মাসই বসা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) ১০টি নতুন বাস। প্রথমে চালক সংকটের কারণে ৭ মাস বসে থাকার পর চালুর দু্‌ই মাসের মাথায় করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে আবারো বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ এসব বাস। অলস বসে থাকার কারণে আয়ুষ্কাল যেমনি কমছে, তেমনি অবচায়িত ক্ষতিও বাড়ছে। তবে বিআরটিসি বলছে, এসব শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কোথাও যাতায়াত করতে হচ্ছে না। বসে থাকলেও প্রতি সপ্তাহে গাড়িগুলো চালু করে সচল রাখা হচ্ছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালে ঢাকার উত্তরায় বাস দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর প্রাণহানির পর নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ওই সময় ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামেও ৯ দফা দাবিতে নিরাপদ সড়কে আন্দোলনে যোগ দেয় চট্টগ্রামের অগুণতি শিক্ষার্থী। পরে গত বছরের মার্চ মাসে ঢাকায় বাসচাপায় আরেক শিক্ষার্থীর প্রাণ গেলে আবারো রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। এবারে আগের ৯ দফার সাথে চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের জন্য বিআরটিসি বাস চালুর নতুন দাবি তোলে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা। এরপরই চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য দশটি বিআরটিসি বাস বরাদ্দের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর শিক্ষার্থীদের জন্য গত বছরের ৩ জুন ৭৩ আসনের ৫টি দ্বিতল ও ১৩ জুলাই ৪৫ আসনের পাঁচটি এক তলা বাস আসে চট্টগ্রাম বিআরটিসিতে। এরপর প্রাথমিক পর্যায়ে নগরীর ২ নং গেট থেকে জিইসি-টাইগারপাস হয়ে আগ্রাবাদ এবং ২ নং গেট হতে চকবাজার-কোতোয়ালী-নিউমার্কেট-টাইগারপাস হয়ে আগ্রাবাদ দুটি রুটে বাস সার্ভিস চালুর পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে চালক সংকটের কারণে বাস সার্ভিস চালু বিলম্বিত হয়। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত বাসগুলো আসলেও চালক ও পরিচালন ব্যয় নির্বাহের জন্য কোনো নির্দেশনা না থাকায় চট্টগ্রাম বাস ডিপো শিক্ষার্থীদের জন্য সার্ভিসটি চালু করতে পারেনি বলে জানানো হয়।
পরবর্তীতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে একতলা বাসগুলোর পরিবর্তে আরো ৫টি দ্বিতল বাস যুক্ত হয় শিক্ষার্থীদের জন্য। এরপর জেলা প্রশাসন বাসগুলো পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের জন্য দেশের খ্যাতনামা লৌহ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাতের শরণাপন্ন হয়। এরপর গাড়িগুলো পরিচালনার জন্য ব্রান্ডিং চার্জ হিসেবে মাসে ৫ লাখ টাকা করে দেয়ার জন্য বিআরটিসি চট্টগ্রাম বাস ডিপোর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় জিপিএইচ ইস্পাত। গত ২৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের জন্য ১০টি দ্বিতল বাস চালু করা হয়।
এদিকে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। পরবর্তীতে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের জন্য বিআরটিসির বাস সার্ভিস। এরপর থেকে বাসগুলো নগরীর বালুচড়া বিআরটিসির বাসডিপো অলস সময় পার করছে। ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি উঠে গেলেও স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বাসগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বিআরটিসি চট্টগ্রাম বাস ডিপোর ম্যানেজার মাসুদ তালুকদার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বাসগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে বাসগুলো চালানো যাচ্ছে না। তবে বসিয়ে রাখা হলেও এগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার চালু করে ইঞ্জিনগুলো সচল রাখা হচ্ছে। এতে বাসগুলো তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেকোন যান্ত্রিক জিনিস অলস পড়ে থাকলে মরিচা ধরে। আবার ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। গাড়ির চাকাগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে। যখন পুনরায় চালু হবে তখন দেখা যাবে রাস্তার নামার সাথে সাথে চাকাগুলো ব্লাস্ট (ফেঁটে যাওয়া) হয়ে যেতে পারে। তবে গাড়ির চালক-হেলপারের ব্যয় নির্বাহের জন্য কোন সমস্যা হচ্ছে না। কারণ বাসগুলোতে জিপিএইচ ইস্পাতের লোগো সাঁটানো রয়েছে। এতে ব্রান্ডিং চার্জ হিসেবে প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা করে দিচ্ছে জিপিএইচ ইস্পাত। করোনার মধ্যেও ওই টাকা পাওয়া গেছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরো ৩২ জন আক্রান্ত একজনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধকাল থেকে বদলে যাচ্ছে সুবর্ণ এক্সপ্রেস