আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আন্দোলনে নিহত সবার পরিবারকে রাষ্ট্রের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ ও ভাতা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক স্মরণ সভায় বিএনপির পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়।
ফখরুল বলেন, এই ১৬ বছর ধরে এবং এই ছাত্র–জনতার আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের সকলকে রাষ্ট্রের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ ও ভাতা দিতে হবে। এটা অত্যন্ত জরুরি ব্যাপার। শুধু এখানে বসে কথা বলে আমরা অনুষ্ঠান করলেই হবে না। এই বিষয়গুলো অত্যন্ত জোরে তুলে ধরতে হবে এবং সরকারকে বলতে হবে যে, এসব করতে হবে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিরোধী দলের নেতা–কর্মীদের ওপর করা ‘এক লাখ ৪৫ হাজার’ মামলা প্রত্যাহার এবং ‘গুম’ হওয়া নেতাকর্মীদের খুঁজে বের করার দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব। খবর বিডিনিউজের।
গত ১৬ বছরে আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এই সভায় খুন ও গুমের শিকার কয়েকশ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। বৃষ্টির মধ্যে এই আয়োজনের শুরুতে নিহতদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর শিল্পীরা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশ করে। বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা– জাসাসের আয়োজনে আন্দোলনে গানের পাশাপাশি মুকাভিনয় পরিবেশন করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ‘আকাশচুম্বী’ উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, জনগণ মনে করে এই সরকার এমন একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেবে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করে এমন একটা জায়গায় আনবে যেন সত্যিকারের অর্থে একটা অর্থবহ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
‘নাগিনীরা ছড়াচ্ছে নিঃশ্বাস’ : দেশ ‘স্বৈরাচার মুক্ত’ হলেও বিপদ কাটেনি বলেও সতর্ক করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আমরা স্বাধীন হয়েছি, হয়ত স্বাধীন হয়েছি, হয়ত হয়েছি। কিন্তু এখনও চতুর্দিকে নাগিনীরা ছড়াচ্ছে নিঃশ্বাস। সেই দলের চক্রান্ত বিভিন্নভাবে ছড়াচ্ছে এবং এরা আমাদেরকে বিভক্ত করবার চেষ্টা করছে। যে ঐক্য নিয়ে আমরা ১৬ বছর লড়াই করেছি সেই ঐক্যটা অটুট রাখা এবং কোনোমতেই চক্রান্তে পা না দেওয়া। আমি বিএনপির নেতা–কর্মী ভাইদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই তারা শত প্রলোভনের মধ্যে, উসকানির মধ্যে শান্ত থেকেছে এবং এই দেশকে রক্ষা করবার জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ফ্ল্যাট করে বরাদ্দের দাবি : সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীনও। তিনি বলেন, শহীদদের জন্য আমাদের কিছু করতে হবে। ৩২ ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের ৬ বিঘা জমি আছে। ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) যেভাবে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে দিয়ে সেখানে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে–শহীদদের জন্য শুধু আমাদের অনুশোচনা করলে হবে না, সেখানে (ধানমন্ডিতে) অ্যাপার্টমেন্ট করে সকল শহীদদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি মানুষের ঘৃণা–বিদ্বেষ থেকে মানুষ সেনানিবাস থেকে সব জায়গায় তার ভাস্কর্য ফেলে দেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বাহাউদ্দিন। তিনি বলেন, সরকারি অফিসগুলোতে এখনও তার (বঙ্গবন্ধু) ছবি আছে–সরকার এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেয়নি। এই ‘ঘৃণা’ ও সংবিধান এক সাথে চলতে পারে না।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, এখানে আমাদের ভাইয়েরা বলেছেন, ‘আমরা বিচার চাই’। আমি বলব, বিচার শুধু হয়েছে ইনশাল্লাহ। এই বিচার এমনভাবে হবে যে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে সবাই ‘মীর জাফর লীগ’ হিসেবে জানবে আগামী ১০০ বছরে। ১৬ বছরের আন্দোলনে শহীদ ও নির্যাতিত পরিবারকে সহযোগিতায় বিরোধী দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের প্রস্তাবও করেন পার্থ।