চিকিৎসরা আজ যে স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করেন, তার সূচনা প্রায় ২০০ শতাব্দী আগে। ১৮১৬ সালে আবিষ্কৃত প্রথম স্টেথোস্কোপটি রোগীর হার্টের শব্দ শুনে রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকদের সহায়তা করত। প্রযুক্তির কল্যাণে স্টেথোস্কোপের এখন নানা ধরনও চলে এসেছে। সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মিশেলে যে স্টেথোস্কোপ তৈরি হয়েছে, তা হার্টের অবস্থা বুঝে ফেলবে মাত্র ১৫ সেকেন্ডেই। এআইচালিত স্টেথোস্কোপটি কেবল কয়েক সেকেন্ডেই তিন ধরনের ভিন্ন হৃদরোগ শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারবে বলে দাবি গবেষকদের।
বর্তমানে আধুনিক সংস্করণের স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করে একটি গবেষণা চালিয়েছে ব্রিটিশ একদল গবেষক। তারা বলেছে, খুব দ্রুত হার্ট ফেইলিউর, ভাল্বের রোগ ও অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন শনাক্ত করতে পারে তাদের বানানো এ স্টেথোস্কোপটি। ডিভাইসটি ‘সত্যিকারের এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন’ হতে পারে, যা রোগীদের আরও দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। পশ্চিম ও উত্তর–পশ্চিম লন্ডনের দুইশো পাঁচটি জিপি সার্জারিতে করা এক গবেষণার পর গোটা যুক্তরাজ্যে ডিভাইস বা স্টেথোস্কোপটি চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
ব্রিটেনের ইম্পিরিয়াল কলেজ অফ লন্ডন এবং ইম্পিরিয়াল কলেজ হেলথকেয়ার এনএইচএস–এর গবেষকেরা এআই পরিচালিত বিশেষ এ স্টেথোস্কোপ বানিয়েছেন। মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত বিশ্বের অন্যতম বড় হৃদরোগ সম্মেলন ‘ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিওলজি’র বাৎসরিক কংগ্রেসে হাজার হাজার চিকিৎসকের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে গবেষণার এসব ফলাফল। প্রচলিত স্টেথোস্কোপের বুকের অংশের পরিবর্তে তাসের মতো আকারের এক ছোট ডিভাইস ব্যবহার করে এ নতুন ডিভাইসটি, যেটি মাইক্রোফোনের মাধ্যমে হৃদস্পন্দন ও রক্তপ্রবাহের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য বিশ্লেষণ করতে পারে, যা মানুষের কান দিয়ে শনাক্ত করা সম্ভব নয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি। ডিভাইসটি হার্টের বৈদ্যুতিক সংকেত রেকর্ড করে ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম নেয় এবং সেই তথ্য ক্লাউডে পাঠায়, যেখানে তা বিশ্লেষণ করে এআই। গবেষকরা আগে থেকেই হাজার হাজার রোগীর তথ্য দিয়ে প্রশিক্ষিত করেছে এই এআই’কে।
‘ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন’ ও ‘ইমপেরিয়াল কলেজ হেলথকেয়ার এনএইচএস ট্রাস্ট’ পরিচালিত এ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ‘ইকো হেলথ’–এর তৈরি এআই স্টেথোস্কোপটি ব্যবহার করে ৯৬টি জিপি সার্জারির ১২ হাজারেও বেশি রোগীকে পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। পরে এসব ফলাফল আরও একশ ৯টি জিপি সার্জারির রোগীদের সঙ্গে তুলনা করেছেন তারা, যেখানে এই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি।
গবেষকরা বলছেন, সম্ভাব্য হার্ট ফেইলিউরের আগের ১২ মাসের মধ্যে ঝুঁকি ধরতে পারার সম্ভাবনা এই নতুন স্টেথোস্কোপে দুই দশমিক ৩৩ গুণ বেশি। অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের ধরন, যেগুলোর আগে থেকে কোনো লক্ষণ থাকে না তবে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে সেগুলো এআই স্টেথোস্কোপ দিয়ে তিন দশমিক পাঁচ গুণ বেশি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। একইভাবে হার্টের ভাল্বের রোগ এক দশমিক ৯ গুণ বেশি সহজে ধরা পড়েছে।
‘ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন’ বা বিএইচএফ–এর ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর ও কার্ডিওলজিস্ট ড. সোনিয়া বাবু–নারায়ন বলেছেন, দুইশো বছরের বেশি পুরানো সাধারণ স্টেথোস্কোপকে ২১ শতকে উন্নত করার চমৎকার এক উদাহরণ এটি। তিনি আরও বলেছেন, এ ধরনের নতুন উদ্ভাবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ‘কারণ অনেক সময় এসব রোগ সম্পর্কে রোগীরা কেবল জরুরি অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছানোর পরেই জানতে পারেন’। আগে থেকে রোগ শনাক্ত করা গেলে মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারে, যা তাদের সুস্থ জীবনে সহায়তা করতে পারে। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ লন্ডন, সাসেক্স ও ওয়েলসের জিপি প্র্যাকটিসে নতুন এ স্টেথোস্কোপ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে গবেষকদের।