১৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকায় নির্মিত হাটহাজারি ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট। বর্জ্য তেল নিঃসরণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী দূষণের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই ২০ লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধের নির্দেশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালুর প্রস্তুতি নিয়েছে পিডিবি।
জানা যায়, প্রায় ৯০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পিকিং পাওয়ার প্লান্টটিতে ২০১২ সালের মার্চে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। প্লান্টটিতে ৮.৯ মেগাওয়াট সক্ষমতার ১১টি জেনারেটর রয়েছে। পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্লান্টটিতে দৈনিক ২৫০ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েলের প্রয়োজন পড়ে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, বর্ষাকালে বেশি বৃষ্টি হলেই গোপনে ফার্নেস অয়েলের পোড়া উচ্ছিষ্ট বর্জ্য সংলগ্ন মরা ছড়া খালে অপসারণ করে। এই খালের মাধ্যমে এসব বর্জ্য তেল হালদা নদীতে গিয়ে মিশে। গত বছরের ৮ জুলাই হালদা নদী-সংলগ্ন মরাছড়া খাল পরিদর্শন করেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রুহুল আমীন। এসময় তিনি খালে তরলবর্জ্য ফেলার প্রমাণ পেয়ে লিখিতভাবে বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবগত করেন। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও মরাছড়া খালে তেল বর্জ্য ফেলে হালদা নদী দূষণের প্রমাণ পেয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে শুনানিতে তলব করেন। ওই বছরের ১৭ জুলাই উভয়পক্ষে শুনানি থেকে ২০ লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ইটিপি তৈরি না করা পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধের নির্দেশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এরপর প্রায় ১৫ মাস ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে প্লান্টটিতে। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবেশগত বিষয়গুলো প্রতিপালন শেষে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে হাটহাজারি ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট কর্তৃপক্ষ।
হাটহাজারি ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টের ব্যবস্থাপক পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শফি উদ্দিন আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘কোন বিদ্যুৎকেন্দ্রেই ইটিপি থাকে না। কারণ ফার্নেস অয়েল নির্ভর প্রত্যেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাঁচামাল (ফার্নেস অয়েল) ব্যবহারের পর উচ্ছিষ্ট পোড়া তেলগুলো পর্যায়ক্রমে আলাদা ট্যাংকে জমা হয়। তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ডিজাইনও ওই রকমের। ট্যাংক পূর্ণ হলেই আমরা এসব বর্জ্য তেল নিলামে বিক্রি করে দেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে পরিবেশগত বিষয়গুলো প্রতিপালন করেছি। পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ছাড়পত্র পেলে পুনরায় উৎপাদন শুরুর প্রস্তুতি নেয়া হবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘হাটহাজারি পিকিং পাওয়ার প্লান্ট কর্তৃপক্ষ নতুন করে পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে। আমরা বিষয়টি যাচাই বাছাই করবো। তাছাড়া ছাড়পত্র দেয়ার বিষয়ে কিছু আইনগত প্রক্রিয়া রয়েছে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’