গত ১৫ বছরে উন্নয়নের নামে এস আলম, বসুন্ধরাসহ কিছু ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর অবিশ্বাস্য লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচার এবং চাঁদাবাজি হয়েছে। এছাড়া বিনা ভোটে নির্বাচন, দমন–পীড়ন, হাট–ঘাট–নদী–পাহাড় দখল, বিচার বহির্ভূত হত্যা–গুম, সন্ত্রাস এবং সব সেক্টরে দুর্নীতি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকাল ৩টায় ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতা অধিকার রক্ষা পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ শীর্ষক সমাবেশ, গণঅভ্যুত্থানের আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য প্রফেসর আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ পেতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষাকারী সংগঠিত শক্তি গড়ে তুলতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ছাত্র–জনতা অধিকার রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক আসমা আক্তারের সভাপতিত্বে ও ওমর সমুদ্রের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য প্রফেসর আনু মুহাম্মদ, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহা মির্জা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতা অধিকার রক্ষা পরিষদের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জি এইচ হাবীব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতা অধিকার রক্ষা পরিষদের উপদেষ্টা প্রফেসর তহুরিন সবুর, কবি ও সাংবাদিক আহমেদ মুনির, আন্দোলনে আহত চবি শিক্ষার্থী শুভ, শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধি নূপূর বেগম প্রমুখ। সমাবেশে প্রফেসর আনু মুহাম্মদ বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনে শ্রমজীবী মানুষ ও জনগণের পুঞ্জিভূত
ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। গণঅভ্যুত্থানের পর আবার সে অবস্থার পুনরাবৃত্তি মানুষ চায় না। ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। সরকার তিন মাসে অনেক সমস্যার সমাধান করবে, এটা আমরা কেউ মনে করি না। কিন্তু শুরুতে সরকারের যে কাজ করা দরকার– আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ ছিল সরকারের প্রথম কাজ, কিন্তু তিনমাস হয়ে গেলেও সরকার এখনও তালিকা তৈরি করতে পারেনি। তিনি বলেন, দ্বিতীয় কাজটা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, নিরাপত্তা দেওয়া তারও কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না।
শিক্ষক ও গবেষক মাহা মির্জা বলেন, গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র–জনতার সাথে বড় অংশের শ্রমজীবী মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। কিন্তু হতাশার সাথে বলতে হচ্ছে, নতুন বাংলাদেশ পেলাম, তা কতটুকু নতুন। অতীতে বিভিন্ন সরকার পরিবর্তনের পর শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। মূল্যবৃদ্ধির কারণে শ্রমজীবী মানুষ ক্রমাগত তাদের খাবার তালিকা থেকে মাছ, মাংস, ডিম বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের বড় কারণ ছিল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। অথচ এখনও সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য লাগামছাড়া।
শ্রমজীবী মানুষ আজও উপেক্ষিত বলে মন্তব্য করে শিক্ষক ও অনুবাদক জি এইচ হাবীব বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর এমন কোনো সময় আসেনি, যখন বৈষম্য, দারিদ্র, মূল্যবৃদ্ধি, লুটপাট, গণতন্ত্রহীনতা, সবলের দাপট ছিল না। গত ১৫ বছরে তা চরম রূপ ধারণ করে এক শ্বাসরোধী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যার বিরুদ্ধে ছাত্র–জনতা–শ্রমজীবী মানুষ মিলে গণঅভ্যুত্থানে শরীক হয়েছিলো। কবি ও সাংবাদিক আহমেদ মুনির বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসকের পতন হলেও, ফ্যাসিবাদী মননকাঠামো, প্রবণতা বিদায় হয়নি। সাবেক অধ্যক্ষ তহুরিন সবুর গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার ও আহতদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানান। আন্দোলনে আহত হয়ে চোখ হারানো শিক্ষার্থী শুভ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে আবেদন নিয়ে ছুটে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। সভাপতি আসমা আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক দেশ ও সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জনগণের বিভিন্ন অংশকে সংগঠিত করে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা এই সংগঠনের।