করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে আটকে থাকা এইচএসসি পরীক্ষাটি নেওয়া সময় এখনও হয়নি বলে মত এসেছে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের বৈঠকে। এছাড়া জেএসসি পরীক্ষা বাতিল হওয়াদের নবমে উত্তীর্ণ করতে মূল্যায়ন কীভাবে হবে, তারও সুনির্দিষ্ট কোনো কোনো পদ্ধতি ঠিক করতে পারেননি বোর্ড চেয়ারম্যানরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বোর্ড চেয়ারম্যানরা বলেন, এই কাজটি (এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা) আমাদের করার কিছু নেই। এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা চেয়ারম্যানদের এখতিয়ার না। বর্তমান স্বাভাবিক পরিস্থিতি না। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার সুযোগ নেই। এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে তেমন আলোচনা না হলেও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা সভায় জানিয়েছেন, ১৫ দিন সময় পেলেই তারা এইচএসসি পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত। তবে এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে পাবলিক পরীক্ষাটি আটকে যায়। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
এদিকে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিলের পর করোনা পরিস্থিতে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবম শ্রেণিতে উন্নীতে কয়েকটি বিকল্প মাথায় রেখে একটি গাইডলাইন করতে যাচ্ছে সরকার। গতকাল আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এই তথ্য জানানো হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা সভা শেষে জিয়াউল হক সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। পরীক্ষা বাতিল করায় আমাদের শিক্ষার্থীদের কীভাবে পরের শ্রেণিতে উন্নীত করা হবে সে বিষয়ে আমাদের একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমরা চিন্তা করেছি- আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করে দেবে। পরবর্তী সময়ে যদি মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি হয় বা মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যেন সঠিকভাবে করতে পারে সেজন্য আমরা তাদের নিয়ে একটা গাইডলাইন তৈরি করছি। আমাদের পরীক্ষা ইউনিটকে নিয়ে আমরা এই গাইডলাইন তৈরি করব। সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করে দেবো। গাইডলাইন সহসাই জানিয়ে দেওয়া হবে কিনা- প্রশ্নে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, গাইডলাইন করতে কিছু সময় লাগবে। প্রাথমিকভাবে (গাইডলাইন) ঠিক করেছি- মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম চলেছে। এই পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা একটা লেসন পেয়েছে। এরপরে সংসদ টিভি, অনলাইন ক্লাসে অংশ নিয়েছে। এরপরে যদি ক্লাস শুরুর সুযোগ হয় সেই সময় থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যতটুকু পড়ানো সম্ভব হবে তার উপর ভিত্তি করে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীতের জন্য মূল্যায়ন করা হবে। যে জায়গাগুলো পড়ানো যাবে না সেগুলো পরবর্তী শ্রেণিতে কিছুটা লিংক আপ করে দেবো, তবে বাধ্যতামূলক না। যেমন- নবম শ্রেণিতে যখন ক্লাস শুরু করবে তখন অষ্টম শ্রেণিতে যেটুকু অতি প্রয়োজন সে বিষয়ে পড়ানোর নির্দেশনা দেবো।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নভেম্বর বা ডিসেম্বরে খোলা না গেলে কী হবে- প্রশ্নে তিনি বলেন, যদি না হয় তাহলে মার্চ পর্যন্ত এবং সংসদ ও অনলাইন ক্লাসের লেসন নিয়ে মূল্যায়ন করবো। মূল্যায়ন কী পরীক্ষা না অন্য কোনো পথ- প্রশ্নে তিনি বলেন, মূল্যায়ন অনেক কিছুর উপর নির্ভর করবে। ক্লাসরুমে এসে মূল্যায়নের পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে তাই হবে। যদি অনলাইনে মূল্যায়ন করতে পারে তবে অনলাইনে হবে। আর যদি অনলাইনে মূল্যায়ন করতে না পারে, তাহলে স্কুলে সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীকে চেনে-জানে। কন্টিনিওয়াস যে অ্যাসেসমেন্ট আছে তার উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করবে। মূল্যায়ন করার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। সেটিও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।
অষ্টমের শিক্ষার্থীদের অটো প্রমোশন শোনা যাচ্ছে- এ বিষয়ে জিয়াউল হক বলেন, অটো প্রমোশন বলতে আসলে কিছু নেই, সবকিছু মূল্যায়নের ভিত্তিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি খোলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়, যদি আমাদের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসতে পারে তাহলে তো ফেস টু ফেস পরীক্ষা হতেই পারে। যদি দেখা যায় যে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে পরীক্ষা নিতে পারবে। আমাদের অনেক প্রতিষ্ঠান এখন অনলাইনে পরীক্ষা নিচ্ছে। অন্যান্য বোর্ড বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যার যা ক্যাপাসিটি আছে সেই অনুযায়ী তারা অনলাইনে নিতে পারে।
অন্যান্য শেণির মূল্যায়ন : ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণির জন্য পরবর্তীতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং এনসিটিবি একটা নির্দেশনা দেবে, জানান জিয়াউল হক। আর নবম শ্রেণির ক্ষেত্রেও সেভাবে একটা মূল্যায়ন করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে। কারণ, নবম এবং দশম শ্রেণি মিলে একটা সিলেবাস। একটা সিলেবাসের অর্ধেক নবম শ্রেণিতে এবং পরবর্তী অংশ দশম শ্রেণিতে পড়ানো হয়। নবম শ্রেণিতে যা আছে তা দশম শ্রেণিতে পড়ানো হবে। আর দশম শ্রেণিতে যা বাকি আছে সেটি যখন আমরা স্কুল খুলবো তখন শেষ করে দেব। একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে উন্নীতের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করে দ্বাদশ শ্রেণিতে তুলে দেবে।
অনেকে পরীক্ষা ছাড়াই তুলে দিচ্ছে- এ বিষয়ে ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, অধিকাংশেরই প্রায় সিলেবাস শেষ হয়ে গেছে। তারা অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা শুরু করেছিল, অনেকেই পরীক্ষার দ্বরপ্রান্তে ছিল। সুতরাং তাদের নিয়ে খুব একটা সমস্যা নাই।