১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব বই পৌঁছে যাবে শিক্ষার্থীর হাতে

চট্টগ্রামে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির সকল পাঠ্যবই বিতরণ । মাধ্যমিক স্কুলে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে ৫ জানুয়ারি

ইমাম ইমু | বৃহস্পতিবার , ২ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

নতুন বছরের প্রথম দিন গতকাল চট্টগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এবার অর্থ সাশ্রয়ের কথা বিবেচনা করে হয়নি বই উৎসব। বিতরণ করা হয়েছে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির সকল পাঠ্যবই। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে প্রাথমিকের ৪০ শতাংশ বই এসে পৌঁছেছে, মাধ্যমিকের বই এসেছে স্বল্প সংখ্যক। বছরের প্রথমদিন চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কয়েকটি বই দেওয়ার কথা থাকলেও বই না আসায় দেওয়া হয়নি। অপরদিকে মাধ্যমিকের কয়েকটি শ্রেণির বই সরবরাহ করা হয়েছে চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে। মাধ্যমিকের দুই থানা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ৭টি বই সরবরাহ করা হয়েছে স্কুলগুলোতে। বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম ৫ জানুয়ারি শুরু হবে। এরপর থেকে বিনামূল্যের পাঠ্যবই ধীরে ধীরে বিতরণ করা হবে জানা গেছে।

নগরের কোতোয়ালী ও পাঁচলাইশ থানা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সাতটি বই পাচ্ছে। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই দেওয়া হবে। যারা নতুন বই পেয়েছে তারা খুবই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। নগরের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে শিক্ষার্থীদের সেই উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির সব বই বিতরণ করা হবে। আর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের সব বই বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল বুধবার শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। এবারে নতুন শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফিরছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা। পাঠ্যবইয়েও অনেক বিষয়বস্তু পরিবর্তন করে সংযোজনবিয়োজন করা হয়েছে। এবার সময় মতো নতুন বই সবার হাতে দিতে না পারায় পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৪৪১টি বই পরিমার্জন করা হয়েছে। এগুলো পিডিএফ আকারে পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে। এ কার্যক্রম গতকাল বুধবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

জানা গেছে, এবার চট্টগ্রামে প্রাথমিকে ৮ লাখ ৪৫ হাজার ২৫৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৪০ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৪টি। চট্টগ্রামে মাধ্যমিক, ইবতেদায়ী মিলে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৯৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৩টি। এর মধ্যে বছরের প্রথম দিনই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সব বই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যদিও চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও বই না আসায় শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক টেন্ডার বাদ দিয়ে নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করার কারণে সময় নষ্ট হয়েছে। সে কারণে যথাযথ সময়ে বই ছাপার কাজ শুরু করা যায়নি। এছাড়া পাঠ্যবই পরিমার্জনের কারণে আরও এক দফা দেরি হয়।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান আজাদীকে বলেন, প্রথম দিন প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পেয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোনো বই পায়নি। আশা করছি, ৫ জানুয়ারির মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া হবে। চট্টগ্রামে প্রাথমিকের ৪০ শতাংশ বই এসেছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা বলেন, আমরা যে বইগুলো পেয়েছি সব পাঠিয়ে দিয়েছি। সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পায়নি। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সাতটি করে বই পাবে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের সব শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাবে।

বুধবার সকালে বই বিতরণ করা হয় নগরের নাজিরবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শীতের সকালে বিদ্যালয়ে ছিল শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি। নতুন বই পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছিল তারা। একটু বেলা হওয়ার পর সবার হাতে পৌঁছে যায় নতুন বই। বই পেয়ে তাদের সে কী আনন্দ। নতুন বইয়ের কোথায় কি আছে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অনেকে, অনেককে দেখা যায় নাকে সুঘ্রাণ নিতে। স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বলে, নতুন বছরে নতুন বই পেয়ে খুব খুশি লাগছে, অনেক আনন্দ লাগছে। বাবার সাথে স্কুলে এসেছি। বাসায় গিয়ে প্রথম বাংলা বইয়ের কবিতাগুলো পড়বো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্দোলন কি হাইজ্যাক করার বিষয়, প্রশ্ন খসরুর
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র শবে মেরাজ ২৭ জানুয়ারি