বছরের শেষ দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাখো ছাত্র–জনতার সমাবেশে ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ দিন সময় ঠিক করে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে মার্চ ফর ইউনিটি সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।
এ সময় তিনি উপস্থিত জনতার সঙ্গে হাত তুলে বিচার ও সংস্কারের শপথ করেন। স্লোগান দিয়ে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার। সমবেতদের উদ্দেশে হাসনাত বলেন, আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় মানুষের কাছে যাবেন। তাদের কথা শুনবেন এবং তাদের কথা তুলে আনবেন। খবর বিডিনিউজের।
নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জুলাই ঘোষণাপত্র চায়। তারা সংস্কার চায়, নতুন সংবিধান চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করার ঘোষণা দিয়েছে, তখন সরকার সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি বিজয়।
তিনি বলেন, সরকারকে জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জুলাইয়ের প্রোক্লেমেশন ঘোষণা করতে হবে। আমাদেরকে বলা হয়, নতুন সংবিধান করবে তার ম্যান্ডেট কোথায়? আমরা বলি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই নতুন সংবিধান হবে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন হবে গণপরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে যারা জয়ী হবে, তারা একইসাথে সংবিধান বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। নতুন সংবিধান গঠন করবে এবং আইনসভার সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের বিচার, সংস্কারসহ নানা আকাঙ্ক্ষা চাওয়া আছে। ছাত্রজনতা অবশ্যই তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে। মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচি থেকেই গতকাল জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা ছিল। সেই প্রস্তুতি নিয়ে সারা দেশ থেকে ছাত্র–জনতাকে শহীদ মিনারে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এই জুলাই প্রোক্লেমেশন হবে আগামীর বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে এর মাধ্যমে নাৎসি বাহিনীর মতো অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে। একইসঙ্গে ১৯৭২ সালের মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচনা করা হবে।
গতকালের এই কর্মসূচি নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনার মধ্যে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু একদিনের ব্যবধানে সোমবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে একই ধরনের ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এরপর গভীর রাতে জরুরি বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণা দেয়, অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, তারা তাতেই সমর্থন দেবে। অর্থাৎ ঘোষণাপত্র সরকারই দেবে। তবে শহীদ মিনারে মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচিও বহাল থাকবে।
শহীদ মিনারের সমাবেশে নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে জুলাই প্রোক্লেমেশন ঘোষণা না করলে ছাত্রজনতা আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। ছাত্রজনতার প্রতি অনুরোধ, আপনারা বিচার ও সংস্কার নিশ্চিত না করে রাজপথ ছাড়বেন না।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, আগামীতে যে ঘোষণাপত্র আসবে, সেখানে প্রত্যেক শহীদের রক্তের ফোঁটার কথা উল্লেখ থাকতে হবে। যদি আমরা সে কথাগুলো না পাই, তাহলে বাংলার চব্বিশের বাঘের বাচ্চারা তা মেনে নেবে না। ঘোষণাপত্রে ৫৩ বছরে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়েছে, তা সংস্কারের ইঙ্গিত থাকতে হবে। আমরা এক নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশে কোনো শহীদ বা আহতের ওপর চোখ রাঙানো চলবে না। টেন্ডারবাজি–চাঁদাবাজি হবে না।
সরকারের উদ্দেশ্যে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বলেন, আপনারা অতি দ্রুত ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপে সক্রিয় হোন। সক্রিয় না হলে চব্বিশের বাঘের বাচ্চারা নিজেদের হাতে আইন তুলে নেবে। আমাদের আগামীর কাজ হবে শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটিতে এনে বিচার নিশ্চিত করা। বিচারিক প্রক্রিয়ায় (আওয়ামী লীগকে) নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।
মার্চ ফর ইউনিটিতে ছাত্র–জনতার ঢল : ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ ফর ইউনিটি গতকাল বিকাল ৩টায় শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু হয় এক ঘণ্টা বাদে। এই কর্মসূচি উপলক্ষে সকাল থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র–জনতা মিছিল আর ব্যানার, পতাকা, ফেস্টুন নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন। সমাবেশে ছাত্র–জনতার ঢল নামে। তারা দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা, আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ, উই ওয়ান্ট উই ওয়ান্ট, জাস্টিস, জাস্টিস, দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ–এমন নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সমাবেশস্থলে পুলিশ, পুলিশের ডগ স্কোয়াড, র্যাব, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন।