১৫ জনের বিরুদ্ধে এক পক্ষের মামলা

আদালতে আসামিদের মারামারি

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২০ at ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ

চাঞ্চল্যকর সুদীপ্ত হত্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছেন আসামিরা। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় এডিশনাল চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন মুরাদের আদালতে এজলাস কক্ষের বাইরে এই ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের এই মারামারির ঘটনায় পরে একপক্ষ ১৫ জনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুদীপ্ত হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে ৪০/৫০ জন আদালতে উপস্থিত হন। হাজিরা শেষে এজলাস কক্ষের বাইরে তারা স্লোগান দিতে দিতে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় দুজনকে আটক করে কোর্ট পুলিশ। তবে তাদের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানায়নি তারা। উভয়পক্ষের মারামারির ঘটনায় আদালত পাড়ায় উত্তেজনা দেখা দেয়। আইনি সেবা নিতে আসা মানুষজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন মোক্তার, জাহিদ, শরীফ ও রাবেয়া বেগম নামে এক নারী। এদের মধ্যে মোক্তার ও জাহিদ আবু হাসনাত বেলালের অনুসারী ও শরীফ দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী বলে এলাকায় পরিচিত। এছাড়া আহত রাবেয়া মাদক কারবারে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা জানান, প্রথমে মোক্তারের ওপর হামলা হয়। তারপর আসামিদের দু’পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় আহত মোক্তার বাদী হয়ে ১৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
মোক্তারের আইনজীবী শাহেদুল আজম শাকিন জানান, মোক্তারসহ ১০ জন আসামি সোমবার (গতকাল) সকালে আদালতে হাজিরা দেন। হাজিরা শেষে বের হওয়ার পর আদালত কক্ষের সামনে ২০-২৫ জন মিলে মোক্তারকে টানাহেঁচড়া করতে থাকেন। হাজিরা দেওয়া কয়েকজন আসামিসহ মোক্তারের বন্ধুরা তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। এসময় তাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন হামলাকারীরা। তিনি আরও জানান, এর মধ্যেই অন্তত অর্ধশত যুবক স্লোগান দিয়ে সেখানে আসেন এবং মোক্তার ও বন্ধুদের মারধর শুরু করেন।
২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সকালে নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার নিজ বাসার সামনে নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তার বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনায় জড়িতরা সবাই নগরীর লালখান বাজার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিল। ফেসবুকে লেখালেখির কারণে মাসুমের নির্দেশে সুদীপ্তকে খুন করা হয়েছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন নগর ছাত্রলীগের নেতারা। আসামির জবানবন্দিতেও নির্দেশদাতা বড় ভাই মাসুমের কথা উঠে আসে। ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট এই হত্যা মামলায় মাসুমকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছিল মামলাটির তদন্ত সংস্থা পিবিআই।
এলাকার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সুদীপ্ত হত্যার ঘটনার পর ওই হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি পক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেন দিদারুল আলম মাসুম এবং অন্যপক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেন আবু হাসনাত বেলাল। আদালতে আসামির ওপর হামলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল বলেও স্থানীয় কয়েকটি সূত্র দাবি করেছে।
এদিকে কোতোয়ালী থানায় দায়ের করা মামলার আসামি হলেন- মো. মাঈনুদ্দিন হানিফ (৩৭), মো. ওয়াসিম (৩৩), রাবেয়া বেগম (৪৪), আমির হোসেন প্রকাশ বাবু (২৬), খাইরুল নুর ইসলাম (২৬) প্রকাশ খায়ের, ফয়সাল আহম্মেদ পাপ্পু (২৬), জাহেদ (২৮), আইনুল কাদের চৌধুরী নিপু (৩২), রাজিবুল ইসলাম (২৭), মামুনুর রহমান রাব্বি (২৫), মো. রুবেল (৩০), বাপ্পি (২৫), পারভেজ (২৫) ও শরীফ (৩০)। এজাহারের ১ নম্বর আসামি ও ৪ থেকে ১৩ নং আসামির সবাই সুদীপ্ত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত। মোক্তার নিজেও এই হত্যা মামলায় অভিযুক্ত। কিছুদিন আগে সুদীপ্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেন তিনি। এ ঘটনার রেশ ধরে আসামিরা তার ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মোক্তার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবির সাবেক উপাচার্য আরআই চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী কাল
পরবর্তী নিবন্ধবন্ধুর বাসায় নিয়ে ধর্ষণ যুবক গ্রেপ্তার