বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের ১৫৮ কোটি ৮৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫৭০ টাকার একটি কাজের অনুমোদন দেয়নি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ৪৩তম সভায় প্রস্তাবটি ‘না’ করে দেয়া হয়। উক্ত প্রস্তাবে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে ৬ তলা একাডেমিক সার্কেল বিল্ডিং এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির লাইনসহ আনুষাঙ্গিক কাজের প্রস্তাবনা করা হয়েছিল। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি ‘না’ করে দেয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভবনটি নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা এবং স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত চালু করার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে একাডেমিক সার্কেল বিল্ডিংসহ ভবনগুলোর নির্মাণকাজ পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন হামিদচরে কর্ণফুলী নদীর তীরে ১০৬ দশমিক ৬৬ একর জমিতে দেশের একমাত্র পাবলিক মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তোলা হচ্ছে। ২০১৩ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয় ২০১৯ সালে। জমি অধিগ্রহণের পর নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০২২ সালে সম্পন্ন হয় বাঁধ নির্মাণ। এরপর নদী থেকে তোলা বালিতে ভরাট করা হয় পুরো এলাকা। ২০২৪ সালের ৪ মার্চ স্থায়ী ক্যাম্পাসের অবকাঠামো ও ভবন নির্মাণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। দৃষ্টিনন্দন নকশায় নির্মাণ করা হচ্ছে অনেকগুলো ভবন। মোট ১৯টি ভবনের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৮টির নির্মাণকাজ চলছে। একাডেমিক সার্কেল ভবনের নির্মাণ কাজটি শুরু করা হয়নি। নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সরকারি ব্যয় অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা হলেও ২৮ অক্টোবর তাতে সুপারিশ করেনি সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে করে ভবনটি ঠিক কবে নাগাদ নির্মাণ শুরু করা যাবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সূত্র বলেছে, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সাল থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু গেল বছরের জুলাই–আগস্টের গণ অভ্যুত্থান, বন্যা পরিস্থিতি, বৈরী আবহাওয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় সময়মতো কাজ হয়নি। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের ৪৫ শতাংশের মতো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ ঠিক কবে নাগাদ শেষ করা যাবে তা নিয়ে কিছুটা সংশয় তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, ১৯টি ভবনের মধ্যে ১৮টির নির্মাণ কাজ গড়ে ৪০ শতাংশের মতো সম্পন্ন হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে বিভিন্ন ভবন। এতে করে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মাঝে স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে উৎসাহ দেখা দিয়েছে। এখানে শ্রেণী কার্যক্রমসহ বসবাস করার ব্যাপারে দেখা দিয়েছে আগ্রহ। কিন্তু নানা দীর্ঘসূত্রতায় ঠিক কবে নাগাদ স্থায়ী ক্যাম্পাসটি চালু হবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি।
স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর রোডম্যাপ তৈরি করতে গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি। ওই কমিটি বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে রোডম্যাপ তৈরির কাজ করছে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, আশা করা যায়, ২০২৭ সাল নাগাদ স্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান শুরু করা যাবে। তবে একাডেমিক সার্কেল বিল্ডিং নির্মাণ পিছিয়ে গেলে রোডম্যাপ অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।
বাংলাদেশ মেরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ‘না’ মানে প্রকল্প বাতিল নয়। কমিটির কিছু অবজারভেশন থাকলে সেটি জানতে চায়। আমরা সেটি জানালে পরবর্তী কোনো বৈঠকে প্রকল্প ব্যয়ের অনুমোদন দেয়া হবে। এটি স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে কিছু সময় বাড়তি লাগবে।












