১৩ দিন পর বাড়ির পাশে পুকুরে মিলল বস্তাভর্তি লাশ

পেকুয়ায় শিক্ষক অপহরণ

চকরিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ১২ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের পেকুয়ায় অপহরণের ১৩ দিন পর স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফের (৪৬) মরদেহ নিজ বাড়ির কাছেই পরিত্যক্ত পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে পেকুয়া সদরের চৌমুহনী এলাকা থেকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত কর্তৃক অপহরণের শিকার হন ওই শিক্ষক। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টার আগে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বস্তাভর্তি অবস্থায় তার লাশটি উদ্ধার করে। এর আগে স্থানীয় এক মৎস্য শিকারি বড়শি দিয়ে ওই পুকুরে মাছ ধরতে গেলে পচা গন্ধ পায়। এরপর সন্দেহ হলে শিক্ষক আরিফের পরিবারে খবর পৌঁছান তিনি।

নৃশংসতায় খুনের শিকার শিক্ষক আরিফের বাড়ি পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মাতবর পাড়ায়। তিনি পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাতব্বর পাড়ার মৃত বজল আহমদের পুত্র। পেকুয়া সদরের সেন্ট্রাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।

পরিবার জানিয়েছে, অপহরণের পর মুক্তিপণ হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে তিন দফায় ৪০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল পরিবারের কাছে। তদ্মধ্যে কিছু টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া হলেও আরিফ আর জীবিত ফেরত আসেনি। শেষ পর্যন্ত নিজ বাড়ির পাশের পুকুরেই মিলল তার বস্তাভর্তি মরদেহ।

পুলিশ বলছে, রশি দিয়ে বেঁধে এবং ইটসহ বস্তাভর্তি করে অপহরণকারীচক্র ওই শিক্ষকের লাশটি কয়েকদিন আগেই পুকুরে ফেলে দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে পচেগলে যাওয়ায় তাকে ঠিক কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তা বুঝতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন হবে।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে অপহরণের শিকার হন আরিফ। এর আগে এদিন বিকেলে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। অপহরণের পর স্বজনদের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে ৪০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এই ঘটনার দুইদিন পর পেকুয়া থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে অপহরণ মামলা করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষক আরিফের ভাই মোহাম্মদ রিয়াদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

রিয়াদুল ইসলাম বলেন, বড় ভাই আরিফের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী নাছির উদ্দিনের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে স্থানীয়ভাবে একটি সালিশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি ভাই। পরিবারের উদ্বৃতি দিয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল মোস্তফা বলেন, পরিত্যক্ত পুকুর থেকে বস্তাভর্তি অবস্থায় উদ্ধারকৃত লাশটি নিখোঁজ শিক্ষক আরিফেরই। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে অপহরণের ছদ্মবরণে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে কীনা তা তদন্তে বের করা হবে এবং প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করা হবে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. রকীব উররাজা দৈনিক আজাদীকে বলেন, শিক্ষক আরিফকে অপহরণের কয়েকদিনের মাথায় খুন করে লাশটি রশি দিয়ে পেঁচিয়ে সঙ্গে ইট ঢুকিয়ে বস্তাভর্তি করে পরিত্যক্ত পুকুরে ফেলা হয়। অনেকদিন হয়ে যাওয়ার কারণে লাশের শরীরে পচন ধরেছে। এতে ঠিক কীভাবে শিক্ষক আরিফকে খুন করা হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে এলেই জানা যাবে খুনের ধরণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটানা ছুটি, শহর ছাড়ছে মানুষ
পরবর্তী নিবন্ধদিনে ৮ কোটি লিটার পানি অপচয়