১৩৬ প্রজাতির লক্ষাধিক ফুল

ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসব উদ্বোধন

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | রবিবার , ৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

১৩৬ প্রজাতির লক্ষাধিক ফুলের সমারোহে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট বন্দর সংযোগ সড়ক সংলগ্ন ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসব উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘ফুলের মতন আপনি ফোটাও গান’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম ফুল উৎসব২০২৫’। উৎসব চলবে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ বলেন, এ উৎসব শুধু চট্টগ্রামবাসীর জন্য নয়, সারা দেশের জন্য ব্যতিক্রম। এ ধরনের আয়োজন প্রশংসনীয়। যে উৎসবে মানুষ উজ্জীবিত হয়, মানুষ উৎফুল্ল হতে পারে, এমন সুযোগ এখানে তৈরি করা হয়েছে। এ ধরনের সুযোগ সব জায়গায় তৈরি করা উচিত। দেশের জন্য এটি একটা উদাহরণ হতে পারে।

তিনি বলেন, সামনের প্রজন্মের জন্য আমাদেরকেই পরিবেশ ও সুযোগ তৈরি করতে হবে। নতুন প্রজন্মের সাথে প্রকৃতির মিতালী তৈরিতে অনন্য ভূমিকা রাখবে এমন আয়োজন। অবৈধ দখল, মাদক অভয়ারণ্যকে ফুলের বাগিচা বানানো হয়েছে। এটাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে অর্থনৈতিক বিকাশে ভূমিকা রাখার কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মুখলেস উর রহমান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দিন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখা) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার, চট্টগ্রাম জেলা) মো. নোমান হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের একান্ত সচিব ড. জয়নাল আবেদীন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদি উর রহিম জাদিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুল উৎসব; চট্টগ্রামে তৃতীয়বারের মতো এ আয়োজন হতে যাচ্ছে। এটি হবে আনন্দ, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক অপূর্ব সমাবেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা ফুলের সমারোহে ডিসি পার্ককে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি প্রজাতি ভিন্ন রং, আকৃতি এবং ঘ্রাণে সমৃদ্ধ, যা সহজেই দর্শকদের মনকে আলোড়িত করবে। দর্শকপ্রিয় করতে বাগান সাজানো হয়েছে দুবাইয়ের মিরাকল গার্ডেনের আদলে।

উল্লেখ্য, প্রায় ১০ বছর ধরে এই এলাকাটি ছিল অবৈধ দখলদারের হাতে। চলত অবৈধ মাটি উত্তোলন, অসামাজিক কার্যকলাপ। সন্ধ্যা হতেই এলাকাটি হয়ে উঠত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল। অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য ছিল এটি। দুই বছর আগে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসন মাদকের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়ে ১৯৪ একর খাস জমি উদ্ধার করে। পরে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক।

এবারের ফুল উৎসবে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মাল্টিকালচারাল ফেস্টিভ্যাল, গ্রামীণ মেলা, বই উৎসব, ঘুরি উৎসব, ফুলের সাজে একদিন, পিঠা উৎসব, লেজার লাইট শো, মুভি শো, ভায়োলিন শো, পুতুল নাচ ইত্যাদি। আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ভাসমান ফ্লাওয়ার গার্ডেন। ফুল উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে নিহতদের উদ্দেশে। শহীদদের স্মরণে স্থাপন করা হয়েছে গণঅভ্যুত্থান কর্নার।

উদ্বোধনের প্রথম দিন ছিল দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। আকাশ মেঘলা হলেও ফুলপ্রেমীদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। দর্শকদের ঘোরাঘুরি, খাওয়া, ছবি ও সেলফি তোলার মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী দিন ছিল মুখরিত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় দলীয় নৃত্য, দলীয় সঙ্গীত, দ্বৈতসঙ্গীত ও পাপেট শো পরিবেশিত হয়। মেলায় ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপগাঁদা, নানা রকমের দেশি ফুলের পাশাপাশি বিদেশি ফুল রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পার্ক দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবড় ভাইয়ের লাঠির আঘাতে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক কাউন্সিলর ওয়াসিমের বাড়িতে হামলা