১৩১৩ থেকে এখন ২২শ শয্যা

চমেক হাসপাতাল ।। অর্থ মন্ত্রাণালয়ের অনুমোদন জনবসহ সবখাতে বরাদ্দ বাড়বে

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৬ মে, ২০২২ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিশাল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের চিকিৎসায় একমাত্র ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা এখন ২২শ। হাসপাতালের বিদ্যমান শয্যা সংখ্যা ১৩১৩ থেকে ২২’শ শয্যায় উন্নীতকরণ ও বর্ধিত শয্যায় সেবা চালুকরণে গতকাল অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর প্রদত্ত এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ১৩১৩ শয্যা হতে ২২০০ শয্যায় উন্নীতকরণ ও বর্ধিত শয্যায় সেবা চালুকরণে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হল। তবে শর্ত থাকে যে, এ সংক্রান্ত সকল বিধি-বিধান, আনুষ্ঠানিকতা ও নিয়ম-কানুন অবশ্যই পালন করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়ায় ২২’শ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনের বিষয়টি এখন আনুষ্ঠানিক চিঠির মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে, শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির অনুমোদনের প্রেক্ষিতে হাসপাতালের জনবল বাড়বে। একই সাথে রোগীর খাবার, ওষুধসহ সব খাতেই বরাদ্দ বাড়বে। এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, অনুমোদিত ১৩১৩ শয্যার বিপরীতে আমরা বাজেট-বরাদ্দ পেয়ে আসছি। তবে চিকিৎসকের সংখ্যা বাদ দিলে হাসপাতালের জনবল কিন্তু ৫০০ শয্যার। এখন শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জনবলও বাড়তি পাওয়া যাবে। বাজেট-বরাদ্দ তো বাড়বেই।

উল্লেখ্য, এই হাসপাতালের (বিদ্যমান ভবনে) বর্তমানে ১৩১৩ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে আড়াই হাজারের কিছু কম-বেশি (প্রায় তিন হাজার)। বছরের পর বছর ধরে এমন অবস্থা চলে আসছে। সার্বিক চিত্র তুলে ধরে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২২’শ তে উন্নীতকরণে সমপ্রতি প্রস্তাবনা পাঠায় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসানের স্বাক্ষরে গত ৯ মার্চ এ সংক্রান্ত চিঠি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়। প্রশাসনিক অনুমোদিত শয্যা সংখ্যার দ্বিগুন রোগী ভর্তি থাকে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, হাসপাতালের সক্ষমতা ও সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন। অনুমোদিত ১৩১৩ শয্যার অনুকূলে এমএসআর (ওষুধ, যন্ত্রপাতি, লিনেন, গজ-ব্যান্ডেজ, কেমিকেল ও রি-এজেন্ট) বাজেট বরাদ্দ দিয়ে ২৬০০-২৮০০ রোগীর মানসম্মত চিকিৎসা সেবা প্রদান অত্যন্ত কঠিন ও দূরুহ। সার্বিক বিষয় তুলে ধরে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২২’শ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রশাসনিক অনুমোদন চাওয়া হয় চিঠিতে।

এ প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে ‘চমেক হাসপাতাল উন্নীত হচ্ছে ২২’শ শয্যায়/প্রস্তাবিত ১০ তলার স্থলে হবে ২০ তলা ভবন’ শিরোনামে গত ২২ মার্চ দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। হাসপাতাল প্রশাসনের প্রস্তাবনার ২০ দিনের মাথায় (২৮ মার্চ) এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ রোকন উদ্দিনের স্বাক্ষরে এ চিঠি পাঠানো হয়। চমেক হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১৩১৩ হতে ২২’শ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদানের লক্ষ্যে নির্মিত ভবন হস্তান্তরের প্রমাণক পত্রসহ অন্যান্য তথ্যাদি প্রেরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। এ নিয়ে ‘চমেক হাসপাতাল : ২২’শ শয্যার পথে এগোল আরো এক ধাপ/ তথ্য চেয়ে চিঠি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের’ শিরোনামে গত ৩১ মার্চ দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় আরো একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

চিঠি পাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই প্রমাণকপত্রসহ অন্যান্য তথ্যাদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায় হাসপাতাল প্রশাসন। পরবর্তীতে এ প্রস্তাবনায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি চেয়ে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ২৪ এপ্রিল এ সংক্রান্ত চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে সর্বশেষ গতকাল (২৫ মে) চমেক হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১৩১৩ হতে ২২’শ শয্যায় উন্নীতকরণ ও বর্ধিত শয্যায় সেবা চালুকরণে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

চমেক হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শুরুতে আড়াইশ শয্যার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা চালু হয় চমেক হাসপাতালে। পরবর্তীতে প্রশাসনিকভাবে শয্যা সংখ্যা ৫০০ এবং এরপরে এক হাজারে উন্নীত করা হয়। ২০০৩ সালের ৩১ জুলাই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা এক হাজার হতে ১ হাজার ১০টিতে উন্নীত করা হয়। এর প্রায় দশ বছরের মাথায় (২০১২ সালের ৩০ আগস্ট) হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৩০৩টি বৃদ্ধি করে ১৩১৩ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। এতদিন প্রশাসনিক অনুমোদিত ১৩১৩ শয্যাতেই চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিল চমেক হাসপাতাল। যদিও অনুমোদিত ১৩১৩ শয্যার বিপরীতে দৈনিক প্রায় ৩ হাজার রোগী ভর্তি থাকে এ হাসপাতালে। এর বাইরে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নেয় আরো প্রায় আড়াই হাজার রোগী। তবে ফের শয্যা সংখ্যা বাড়ল চমেক হাসপাতালে। এবারও দশ বছরের মাথায় (২০১২ এর পর)। যদিও এবার এক লাফে ৯’শ শয্যা বেড়ে ১৩১৩ হতে মোট শয্যা ২২’শ শয্যায় উন্নীত হয়েছে।

১৩১৩ হতে ২২’শ শয্যায় উন্নীত হওয়ার বিষয়টি বিশাল ব্যাপার বলে মনে করেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। তিনি বলেন, এটি অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। তবে দেরিতে হলেও এখন হয়েছে। এটাই বড় বিষয়। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পুরণো প্রশাসনিক ভবনের স্থলে হাসপাতালের দশতলা একটি ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে দশতলার পরিবর্তে নতুন করে সেখানে বিশ তলা ভবন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন ২০ তলা অবকাঠামোর নির্মাণ হলে তাতে আরো অন্তত ১ হাজার শয্যার সংস্থান হবে বলে মনে করছে হাসপাতাল প্রশাসন। ফলে ২২’শ শয্যার অনুমোদন চাওয়া হলেও ২০তলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হলে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা আড়াই হাজারে উন্নীত করা যাবে বলে মনে করেন চিকিৎসক ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় গুরুত্ব দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬