চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ২৫ বছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে)। দেশে ফুটবল খেলার মাঠ সংকট নিরসনে বাফুফের নতুন কমিটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম বরাদ্দ চেয়েছিল। প্রথমে দশ বছরের জন্য দেওয়ার কথা বলা হলেও পরে বাফুফে দাবি করে ২৫ বছরের জন্য। কারণ কমপক্ষে ২০ বছরের জন্য স্টেডিয়াম বরাদ্দ না পেলে ফিফার অর্থায়ন পাওয়া যেতো না। এখন বাফুফে তাদের চাওয়া অনুযায়ী ২৫ বছরের জন্যই স্টেডিয়াম পেলো। বাফুফে কাগজ–কলমে স্টেডিয়াম বরাদ্দ পাওয়ায় এখন ফিফার কাছে কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাপত্র দিতে পারবে। তবে এই স্টেডিয়াম নিজেদের অধীনে রাখতে বাফুফেকে মানতে হবে বেশ কিছু শর্ত। গতকাল বাফুফের কাছে স্টেডিয়াম বরাদ্দের চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সেখানেই এই স্টেডিয়ামের লিজ বহাল রাখতে ১২টি শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী ২৫ (পঁচিশ) বছর এই লিজ চুক্তি কার্যকর থাকবে।
উল্লেখিত স্টেডিয়ামের যে কোনো ধরনের সংস্কার, মেরামত ও উন্নয়নমূলক কাজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে অবহিত করে সম্পন্ন করতে হবে এবং এ কাজের যাবতীয় ব্যয়ভার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে বহন করতে হবে। লিজকৃত সময়সীমার মধ্যে ক্রীড়ানুষ্ঠান চলাকালীন বা অন্য কোনো কারণে মাঠ কিংবা স্টেডিয়ামের অবকাঠামোর কোনো ক্ষতি সাধিত হলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন উক্ত ক্ষয়–ক্ষতির ব্যয়ভার বহন করবে। স্টেডিয়ামের বিদ্যুৎ (ফ্লাড লাইটসহ), পানি, গ্যাস, টেলিফোনসহ ও অন্যান্য ইউটিলিটি বিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে বহন করতে হবে। স্টেডিয়ামে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলা চলাকালীন পরিষদের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন সংরক্ষণ করতে হবে। স্টেডিয়াম পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পরিষদের অনুমতি ও তত্ত্বাবধান ব্যতিরেকে স্টেডিয়ামের মৌলিক কাঠামোর কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিকমানের খেলাধুলায় ১৫% গেটমানি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুকূলে প্রদান করতে হবে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পূর্বানুমতি ব্যতিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন উক্ত স্টেডিয়াম অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করতে পারবে না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রয়োজনে কমপক্ষে তিন মাসের নোটিশে এই অনুমতিপত্র বাতিলের ক্ষমতা পরিষদ সংরক্ষণ করে। উপরোক্ত শর্তবলী সন্তোষজনক পালন সাপেক্ষে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চুক্তি নবায়ন করতে পারবে। স্টেডিয়ামের বিপরীতে ভূমি করসহ বিধিমত সকল রাজস্ব ব্যয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে বহন করতে হবে।
এই ১২ শর্তের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোনো সংশ্লিষ্টতা আর থাকল না। শর্ত মোতাবেক যেহেতু বাফুফে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুমতি ব্যতিত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবে না সেহেতু জেলা ক্রীড়া সংস্থা এই মাঠ ব্যবহার করতে পারবে কিনা তা নির্ভর করবে এনএসসির উপর। বরাদ্দপত্রে স্বাক্ষর করা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উপ সচিব, পরিচালক (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) মাহবুব মোরশেদ সোহেল দৈনিক আজাদীকে বলেন, এই মাঠ চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা ব্যবহার করতে পারবে কেবল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুমতি নিয়ে। তবে এই মাঠে আর ক্রিকেট হতে পারবে না। যেহেতু ফুটবল ফেডারেশন এই মাঠ সংস্কার করবে ফিফার অর্থায়নে সেহেতু এখানে উইকেট বানানো সম্ভব না। ফুটবল ফেডারেশনের সারা বছরের কর্মসূচি সম্পন্ন করার পর চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা এই মাঠ কতদিন ব্যবহার করতে পারবে বা কোন কোন ইভেন্ট এই মাঠে খেলাতে পারবে সেটা বড় একটি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকরা মনে করছেন এম এ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে নির্বাসনে চলে যাবে চট্টগ্রামের খেলাধুলা। যেহেতু চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা ২৫ টির বেশি ইভেন্ট আয়োজন করে থাকে। যার বেশিরভাগই আয়োজন করা হয় এই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। ক্রীড়া সংগঠকরা বলছেন এই সিদ্ধান্তের ফলে চট্টগ্রামের খেলাধুলায় বড় একটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলো।