১২ বিচারপতিকে পাঠানো হলো ছুটিতে, পাবেন না বেঞ্চ

| বৃহস্পতিবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২৪ at ৪:২২ পূর্বাহ্ণ

চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। আওয়ামীপন্থী বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল বুধবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাই কোর্ট ঘেরাও কর্মসূচির মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা প্রধান বিচারপতির এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

তিনি বলেন, বিচারপতিদের অপসারণে বিদ্যমান কোনো বিধান না থাকায় তাদের আপাতত কোনো বেঞ্চ দেওয়া হবে না। বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের রিভিউ আগামী ২০ অক্টোবর আপিল বিভাগে কার্যতালিকায় ১ নম্বরে শুনানির জন্য থাকবে। সে পর্যন্ত এই ১২ বিচারককে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হবে না। খবর বিডিনিউজের।

১২ বিচারপতির মধ্যে ১০ জনের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পেরেছেন বাংলাদেশ আইন সমিতির সদস্য সচিব অ্যডভোকেট এম মাহবুবুর রহমান খান, যিনি বিকেলে রেজিস্ট্রার জেনারেলের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের একটি বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। ওই দশ বিচারক হলেনবিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন, বিচারপতি মো. আকতারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম, বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন, বিচারপতি নাঈমা হায়দার, বিচারপতি আতোয়ার রহমান, বিচারপতি খিজির হায়াৎ ও বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার। তাদের মধ্যে এস এম মনিরুজ্জামান, খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, শাহেদ নূরউদ্দিন, মো. আকতারুজ্জামান, মো. আমিনুল ইসলাম ও এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন দুপুরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

বিচারপতি আতোয়ার রহমান নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে গত মঙ্গলবার হট্টগোলের ঘটনার পর ওই বেঞ্চের বিচারক বদলে দেন প্রধান বিচারপতি। বেঞ্চ অফিসাররা দুর্নীতির মাধ্যমে কার্যতালিকায় মামলা তোলায় অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে ওই বেঞ্চের বিচারকের কাছে অভিযোগ করেছিলেন একজন আইনজীবী। কিন্তু তার প্রতিকার না করায় বিচারপতি আতোয়ার রহমান সেই আইনজীবীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়। তারপর বিচারপতি আতোয়ার রহমান খানকে বাদ দিয়ে বেঞ্চ নতুন করে গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি।

এদিকে মঙ্গলবার ঢাকার হাকিম আদালতেও আরেকটি ঘটনা ঘটে। দুই মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক ও ফারুক খানকে আদালতে নেওয়া হলে দলটির সমর্থক আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন। সে সময় তারা জয় বাংলাসহ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এরপর আওয়ামীপন্থি বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে হাই কোর্ট ঘেরাওয়ের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যাদের নেতৃত্বে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।

এদিকে বুধবার সকালেই খবর আসে, বিগত সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করা এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা হাই কোর্টের ১২ জন বিচারককে ‘চায়ের দাওয়াত’ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সে জন্য প্রধান বিচারপতির দিনের কর্মসূচিতেও পরিবর্তন আনা হয়। বেলা ২টা পর্যন্ত ছয়জন বিচারক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন। তখনই সুপ্রিম কোর্টে আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে, ওই বিচারকদের ছুটিতে পাঠানোর কথা জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

এরপর বিকেলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞার কক্ষে বৈঠকে বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও এ আর রায়হান এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিব শরীফুল আলম ভূঁঞা এবং বাংলাদেশ আইন সমিতির সদস্য সচিব অ্যডভোকেট এম মাহবুবুর রহমান খানও উপস্থিতি ছিলেন সেই বৈঠকে। ওই বৈঠক শেষে প্রধান বিচারপতির কক্ষে যান রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুরোদমে কাজ শুরু করেছে সিএমপি
পরবর্তী নিবন্ধনৌ রুটে পণ্য পরিবহনে নতুন প্লাটফর্ম বিডব্লিউটিসিসি