গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নগরীর ৭ থানা ও ১২ ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করেছে নগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। গত বুধবার গভীর রাতে (রাত ১টা ৪৫ মিনিটে) চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু এবং সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ–তাদের নিজস্ব ফেসবুকে নগরীর ৭ থানা ও ১২ ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করেন। গভীর রাতে থানা এবং ওয়ার্ডের ১৯টি ইউনিটের কমিটি ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ সদস্যের আংশিক কমিটির একাংশের (৭ সহ সভাপতি, ৩ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২ জন সাংগঠনিক সম্পাদক) ১২ নেতা।
ওই গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নগরীর পতেঙ্গা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি এবং পতেঙ্গা থানাধীন ৪০ ও ৪১ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই সময়ে বন্দর থানা কমিটি এবং বন্দর থানাধীন ৩৬ নম্বর ও ৩৮ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি, সদরঘাট থানা কমিটি ও সদরঘাট থানাধীন ২৯ ও ৩০ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি, পাহাড়তলী থানা কমিটি ও পাহাড়তলী থানাধীন ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি, আকবরশাহ থানা কমিটি ও আকবরশাহ থানাধীন ৯ ও ১০ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি, চকবাজার থানা কমিটি ও চকবাজার থানাধীন ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি এবং চান্দগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক পেইজ থেকে। থানা ও ওয়ার্ডের এই ১৯টি ইউনিটের কমিটি ১৩ মার্চ বুধবার গভীর রাতে প্রকাশ করা হলেও প্রতিটি কমিটি অনুমোদনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করেছেন ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ এ। এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু আজাদীকে বলেন, আমরা নগরীর ১৫ থানা ও ৪৪ ওয়ার্ডে ঐক্যবদ্ধভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে ধারাবাহিক ভাবে সম্মেলন করেছি। আমাদের এই সম্মেলনে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব ভাই (মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী), সাধারণ সম্পাদক নাছির ভাই (আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন), নওফেল ভাই (শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল) এবং নগর আওয়ামী লীগের সকল শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটি ওয়ার্ডের সম্মেলনে তারাও (যারা প্রতিবাদ করছে একাংশের ১২জন) উপস্থিত ছিলেন। শান্তিপূর্ণ সম্মেলনের পর আমরা কমিটি রেডি করে ঢাকায় আমাদের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য। কিন্তু আমাদের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ভাইয়ের মা অসুস্থ থাকায় আর এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারিনি। এরপর সাচ্চু ভাইয়ের মা মারা গেলেন। তারপর সাচ্চু ভাই অসুস্থ হয়েছেন। তখন আর কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমরা বুধবার রাতে কমিটি ঘোষণা করেছি। এখানে আমরা আমাদের কোনো আত্মীয়–স্বজনদের কমিটিতে রাখিনি, কারো মুখ দেখে কমিটিতে রাখিনি। যারা দীর্ঘদিন স্বেচ্ছাসেবক লীগ করেছে, মিছিলে, মিটিংয়ে ছিল তাদেরকে নিয়েই কমিটি করেছি আমরা। এই ৭টি থানা এবং ১২টি ওয়ার্ডের কমিটিতে আমরা ১১শ’ ত্যাগী ছেলেকে কমিটিতে স্থান দিতে পেরেছি। প্রত্যেকেই কিন্তু দলের ত্যাগী নেতাকর্মী। সবগুলো কমিটি হলে প্রায় ৩ হাজার ছেলে পদ–পদবী পাবে। যারা প্রতিবাদ করছে–তাদের সাথে আমরা সব সময় যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছি। আমরা কমিটি করেছি। কোন ছেলেটাকে আমরা দলের বাইরে থেকে এনে দিয়েছি–সেটা তারা বলুক। তাদের যদি কেউ পছন্দের থাকে–তারা বলুক, ত্যাগী কেউ থাকলে তাদের নাম দিক। তারা তাদের মত চলতে চায়। সংগঠন তো সংগঠনের মতো চলবে। তারা সেটা মানে না। তারা সব সময় শুধু অভিযোগ করে। তাদের কাজ হচ্ছে শুধু বিএনপির মত নালিশ করা। তারা ঢাকায় গিয়েও অভিযোগ দিয়েছিল। এই কথা আমি ঢাকায় আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেও বলেছি। তাদের কোনো কিছু বলার থাকলে তারা সংগঠনের মিটিংয়ে বলবে। কিন্তু তারা সেটা করে না–শুধু অভিযোগ আর নালিশ করে। এদিকে ২০ সদস্যের নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আংশিক কমিটির একাংশের ১২ নেতা–নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সুজিত দাশ, দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ, মনোয়ার জাহান মনি, মোহাম্মদ আজিজ মিসির, আবদুর রশিদ লোকমান, মিনহাজুল আবেদীন সায়েম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, আবদুল্লাহ আল মামুন, সরফরাজ নেওয়াজ চৌধুরী রবিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাসুদ খান ও মো. সালাউদ্দিন তাদের স্বাক্ষরযুক্ত এক প্রতিবাদলিপিতে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের ঘোষিত কমিটি অবৈধ এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র বিরোধী। আমরা নিম্ন স্বাক্ষরিত চটগ্রাম মহানগর কার্যকরী কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য করেছি ১৩ মার্চ দিবাগত রাত (১৪ মার্চ) আনুমানিক ১টা ৪৫ মিনিটে ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে প্রচারিত কমিটি ভাইরাল করা হয়েছে। আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় কর্মীদের জানাচ্ছি উক্ত প্রচারিত কমিটির সাথে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। আমরা কোনো অপরাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত কমিটি গঠনই আমাদের লক্ষ্য। যা অচিরেই প্রকাশিত হবে। বিভ্রান্তিকর কমিটি প্রচারের প্রতিবাদে অচিরেই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।’
উল্লেখ্য, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০২২ সালের ৯ মার্চ। তিন বছরের জন্য এই কমিটি ঘোষণা করা হলেও দুই বছর চলে গেছে আংশিক কমিটি দিয়েই। এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটিই হয়নি। ২০ সদস্যের আংশিক কমিটির মধ্যে ৭ সহ সভাপতি, ৩ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২ জন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ১২ জন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। অপরদিকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অপর ৮জন নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাবেক সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী।