১২০-১২৫ দিনের মধ্যে আগাম আমানের ফলন

দ্রুত ফলনে খুশি রাঙ্গুনিয়ার কৃষক খালি হওয়া মাঠে এবার লাগাবেন আগাম শীতকালীন সবজি

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | রবিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২৩ at ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ

মাঠজুড়ে আমন আবাদ এখন সবুজ রূপ ধারণ করে ফলন আসতে শুরু করেছে। কিন্তু সবুজ এই কৃষি মাঠের মধ্যেই কিছু কিছু জমিতে শোভা ছড়াচ্ছে সোনা রঙের আমন ধান। পাকা এই ধান কেটে ঘরে তোলার ব্যস্ততা কৃষকদের মাঝে। কেউ কাটছেন, কেউ বাঁধছেন আঁটি। এমন চিত্র দেখা গেছে রাঙ্গুনিয়ার পোমরা, বেতাগী, কোদালা, পদুয়া ইউনিয়নসহ উপজেলার বিভিন্ন কৃষি মাঠে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে বলে জানান কৃষকরা। আগাম জাতের আবাদ করায় এসব মাঠে ১২০১২৫ দিনের মধ্যে ফলন এসেছে বলে জানান কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় আগাম আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের হাজারীখীল গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কৃষক মো. আবুল হোসেন আগাম আমন ধান কাটছেন। তিনি বলেন, এবার এক একর জমিতে এ্যারাইজ এজেড৭০০৬ জাতের হাইব্রিড আমন ধান চাষাবাদ করেছি। ফলন দেখে এলাকার সকল কৃষক আমার জমিটি দেখতে আসেন, জানতে চান এটি কি জাত। আমার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরাও যাতে আগাম আমন ধান চাষাবাদ করেন সে ব্যাপারে উৎসাহ যোগাই। আগাম আমন চাষাবাদ করলে জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করা যাবে এবং বাজারে আগাম সবজির দামও বেশ ভাল পাওয়া যাবে। তাই আমি বিগত দুবছর যাবত এভাবে চাষাবাদ করে আসছি এবং আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছি।

বেতাগী ইউনিয়নের মধ্য বেতাগীর কৃষক মো. দিদারুল আলম চৌধুরীও এবার আগাম আমন ধান ব্রিধান ৯০ জাতের চাষাবাদ করেছেন। এক একরের অধিক পরিমাণ জমিতে এই আবাদ করেছেন তিনি। ফলন নিয়েও তিনি খুব সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এ জাতটি সুগন্ধিযুক্ত এবং জীবনকাল ১২৫ দিন হওয়ায় জাতটি নির্বাচন করে দেন কৃষি অফিসার উত্তম দাদা। যাতে রবি মৌসুমে আগাম মরিচ চাষ করতে পারি, সেজন্য এই আগাম আবাদ করেছি। প্রতি চল্লিশ শতকে ২০২৫ মণ ধান পেতে পারি বলে মনে হচ্ছে। চাল খুব ছোট এবং সুগন্ধিযুক্ত হওয়ায় বাজার মূল্যও আশা করি ভাল পাব। তাছাড়া আমি আগাম ইন্ধিরা মরিচের চাষাবাদ করব তাই জাতটি আমার জন্য বেশ উপযোগী মনে করছি।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে রাঙ্গুনিয়ার ১৫ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। প্রথমদিকে অনাবৃষ্টি, পরবর্তীতে ভারী বৃষ্টিতে ভেসে যায় কৃষকের আবাদ। পরবর্তীতে পূর্ণোদ্দমে আবাদ করে শতভাগ আবাদ সম্পন্ন করেন কৃষকরা। এরমধ্যে আবার বৈরি আবহাওয়ার কারণে পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও সঠিক সময়ে কীটনাশক ব্যবহার করায় তা তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। বর্তমানে এসব আবাদে কিছু জমিতে ফুল এবং কিছু জমির আবাদ দুধ অবস্থায় আছে। যেগুলো স্বাভাবিকভাবে আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে কাটার উপযুক্ত হবে। একই সময়ে রোপণ করা ধান যেগুলো স্বাভাবিকভাবে ১৪০৪৫ দিনের মধ্যে ফলন আসে, সেখানে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত এই আগাম জাতগুলো আবাদ করার কারণে ১২০২৫ দিনের মধ্যে ফলন এসেছে। রাঙ্গুনিয়ায় আগাম জাতের আমন চাষিরা বর্তমানে আমন ধান ঘরে তুলছেন। তাদের হেক্টর প্রতি উপশি জাতে সাড়ে ৫ থেকে ৬ টন এবং হাইব্রিড জাতে সাড়ে ৬ থেকে সাড়ে ৭ মেট্টিক টন হারে ফলন পাচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এই বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার শীল বলেন, আমন ধান কাটার পর যে সময়টুকু জমিটি পতিত থাকে, সে সময়টুকুতে যদি কৃষকরা সরিষা চাষাবাদ করেন, তাহলে আমনবোরো ফসলের মাঝামাঝি সময়ে একটি অতিরিক্ত ফসল পেতে পারেন কৃষকরা। এভাবে দুফসলি জমি তিন ফসলি জমিতে পরিণত হবে। ফলে বাড়বে ফসলের নিবিড়তাও। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক কৃষককে পরামর্শ দিয়ে আগাম জাতের আমন আবাদ করিয়েছি। তার ফলনও বেশ ভালো পাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, আমরা ইতিমধ্যে আগাম আমন ধানের চাষাবাদ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। তারই আলোকে এবার ব্রিধান ৭৫, ৯০, ৯৫ এবং হাইব্রিড জাতের এ্যারইাইজ এজেড ৭০০৬, ধানী গোল্ড প্রবৃতি জাতের আগাম আমন ধানের চাষ করার পরামর্শ প্রদান করেছিলাম কৃষকদের। যাতে দুফসলী জমিকে তিন ফসলী জমিতে রূপান্তিত করা যায়। আবার সে জমিতে আগাম সবজিও চাষাবাদ করতে পারবেন কৃষক। অথবা আমন ধান কাটারম পরপরই বিনা চাষে সরিষা চাষাবাদ করে দেশের তেলের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আগাম জাতের আমন ধান কেটে ঘরে তুলছেন কৃষকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১ কোটি টাকা অনুদান দিলেন ডা. সৈয়দ আবু তাহের
পরবর্তী নিবন্ধএবার আওয়ামী লীগেরও মহাযাত্রার কথা বললেন ওবায়দুল কাদের