শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে নবনিযুক্ত প্রশাসক চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেছেন, আমার প্রধান টার্গেটই হচ্ছে চট্টগ্রাম চেম্বারে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ওখানে ক্লিয়ার–কাট বলে দেয়া হয়েছে যে, ১২০দিনের মধ্যে সুন্দর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত পরিষদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করে মন্ত্রণালয়কে জানাবো। আমি নির্দিষ্ট সময়ে একটি সুষ্ঠু এবং সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, আরো কিছু ইস্যু আলোচনায় আসতে শুরু করেছে। সেগুলোর ব্যাপারে সরকারকে জানাবো এবং সরকারের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নিয়েই আমি কাজ করবো। আমি ব্যবসায়ী নই, চট্টগ্রাম চেম্বার সম্পর্কে আমার ধারণা খুব একটা স্পষ্ট নয়। আমাকে সবকিছু জানতে হবে। আমার মূল টার্গেটই হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগই সরকারের নির্দেশনা এবং প্রচলিত আইন কানুন অনুসরণ করে সম্পন্ন করবো। তবে পুরো বিষয়টি একটু সময়সাপেক্ষ বলে তিনি স্বীকার করেন। গতকাল নিজ কার্যালয়ে বসে দৈনিক আজাদীকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইতোমধ্যে আমরা প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করেছি। পরশু আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি, গতকাল আমি চেম্বারে গিয়েছিলাম। কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে পরিচিত হয়েছি, মতবিনিময় করেছি। স্টেকহোল্ডারদের সাথেও কথা বলতে শুরু করেছি। আমি পুরো বিষয়টি সম্পর্কে আগে জানবো, সরকারকে জানাবো এবং সরকারের কাছ থেকে আসা নির্দেশনা অনুসরণ করে সুষ্ঠু একটি নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয় সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবো। আমাকে যে সময় দেয়া হয়েছে সেই টাইমফ্রেমের মধ্যে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে চেষ্টা করবো। যদি এক্ষেত্রে নতুন করে কোন ইস্যু সামনে আসে সেগুলো আইডেন্টিফাই করে সরকারকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চাইবো। তিনি চেম্বারের বিধি, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্ট আইন কানুন দেখে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবেন বলেও জানান।
তিনি বলেন, একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে সদস্য তালিকার ব্যাপার আছে, নবায়নের বিষয় আছে, নতুন কোন সদস্য হওয়ার বিষয় আছে, ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং আপত্তি নেয়ার বিষয় আছে, কোন পেন্ডিং বিষয় আছে কিনা যেগুলোর কারণে পুরো পরিষদকে পদত্যাগ করতে হলো সেগুলো চিহ্নিত করে সরকারকে জানাবো এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো। আমি নির্বাচনের প্রাক প্রস্তুতি শুরু করেছি। একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগই নেবো।
নতুন সদস্য করা, কিংবা নবায়ন করে নতুন ভোটার লিস্ট করা, ভোটার লিস্টের ব্যাপারে আপত্তি শুনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কিনা প্রশ্ন করা হলে মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ১২০ দিনের জন্য। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমার নেই। ওই ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হলে আমি সরকারকে জানাবো এবং সরকারের কাছে নির্দেশনা চাইবো। সেক্ষেত্রে সরকার যে নির্দেশনা প্রদান করবে সেই অনুষায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
চট্টগ্রাম চেম্বারের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভোটের দিনের ১২০দিন আগে হওয়া সদস্যই একমাত্র ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে ১২০ দিনের টাইমফ্রেমের মধ্যে নির্বাচন করতে হলে আন্দোলনকারী ব্যবসায়ীদের নতুন সদস্যপদ প্রদানের যে দাবি সেটা মেনে নেয়া সম্ভব কিনা প্রশ্ন করা হলে চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ১২০দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের। এর মানে হচ্ছে আমি দায়িত্ব নেয়ার সময়কালের ইমিডিয়েট আগের যে ভোটারলিস্ট রয়েছে সেটা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এখন এই বিষয়টি নিয়ে যদি কোন পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে সেটি আমি সরকারকে জানাবো, বা সরকার যদি কোন নির্দেশনা দেয় সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম চেম্বারে বর্তমানে অর্ডিনারি গ্রুপে ৩৫০৯ জন এবং এসোসিয়েটস গ্রুপে ৪০৭৩ জন মিলে সর্বমোট ৭৫৮২ জন ভোটার রয়েছেন। আন্দোলনকারী ব্যবসায়ীদের অন্যতম নেতা, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নুরুল হক ইতোপূর্বে অভিযোগ করেছেন যে, উপরোক্ত ভোটারদের মধ্যে সাবেক এমপি এম এ লতিফের অডিনারি গ্রুপে ৮২২টি এবং সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলমের এসোসিয়েটস গ্রুপে ৪৯৩টি ভোট রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই চেম্বারের সদস্য হওয়ার যোগ্য নয় এবং ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে সদস্য করা হয়েছে বলে দাবি করে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয় যে, চেম্বারের নির্বাচনের আগে এসব ভোটাদের ট্রেড এবং টিন লাইসেন্স যাছাই বাছাই করতে হবে। সদস্য লিস্ট এবং বছরের পর বছর সদস্য হতে না পারা প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সদস্য করার পরই কেবল চেম্বারের নির্বাচন ব্যবসায়ীরা মেনে নেবে। গতকাল ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশার সাথে সাক্ষাৎ করে নিজেদের অবস্থান আবারো স্পষ্ট করে দিয়েছেন বলেও ব্যবসায়ী নেতা এরশাদ উল্ল্যাহ এবং একরামুল করিম দৈনিক আজাদীকে জানান।
স্মরণ করা যেতে পারে, ছাত্রগণ অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ এবং দাবির মুখে দায়িত্ব নেয়ার এক বছর এক মাসের মাথায় চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজসহ ২৪ পরিচালক পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর চেম্বারের সাবেক সভাপতি ওমর হাজ্জাজ গত ২ সেপ্টেম্বর চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিও বরাবরে অনুরোধ জানান। এরই প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশাকে প্রশাসক নিয়োগ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করে নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। ২০২৩ সালের ৬ অগাস্ট ওমর হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন ২৪ সদস্যের পর্ষদ ও চেম্বারের প্রেসিডিয়াম দায়িত্ব নিয়েছিল।