বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য সাংবিধানিক অধিকার পাঁচটি। এগুলো হলো– অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। খাদ্য প্রধান চাহিদা হওয়ার কারণে ২০১৮ সালের ৭ই জুন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ‘বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস’ উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। খাদ্য সমস্যাটির গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য এই দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘খাদ্যনিরাপত্তার একটি জরুরি কাজ হলো খাদ্যব্যবস্থার প্রতিটি ধাপে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। এই ধাপগুলো ফসল সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, সরবরাহ থেকে শুরু হয়ে খাবার প্রস্তুত ও গ্রহণ করা পর্যন্ত বিস্তৃত। অনিরাপদ খাদ্য শুধু মানুষের স্বাস্থ্য নয়, বরং অর্থনীতির জন্যেও ক্ষতিকর। অনিরাপদ খাদ্যের কারণে অসহায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষত নারী ও শিশু এবং দেশান্তরী মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’ গত ১৭ জুলাই দৈনিক আজাদীতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, দেশে খাদ্যশস্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সরকার ১১ লাখ টন চাল ও গম আমদানি করছে। এর মধ্যে ৫ লাখ টন চাল ও ৬ লাখ টন গম জিটুজি এবং উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এই চাল ও গম আমদানি করতে সরকারের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। জানা যায়, দেশে খাদ্যশস্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। সামপ্রতিক হিসাব অনুযায়ী সরকারের গুদামে ১৫ লাখ ৬২ হাজার ৯০৪ টন চাল, ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬৫২ টন গম এবং ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৯৬ টন ধান মিলে মোট ১৯ লাখ ৭ হাজার ৮৮৮ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে।
মজুদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং তা দেশের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট বলে উল্লেখ করে খাদ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন, তবে বাজার পরিস্থিতি যাতে অস্থিতিশীল না হয় সেজন্য সরকার সবসময় গুদামে বাড়তি মজুদ রাখে। শুধু বাজার পরিস্থিতি নয়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেও এই বাড়তি মজুদ জরুরি। বিষয়টি মাথায় রেখে খাদ্য মন্ত্রণালয় ৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে জিটুজি ভিত্তিতে ৩ লাখ টন এবং বিদেশি সরবরাহকারীর কাছ থেকে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বাকি ২ লাখ টন চাল আমদানি করবে। তবে দরপত্রে যদি সরকারের কাছ থেকে বেসরকারি সরবরাহকারীর কাছে দর কম পাওয়া যায় তাহলে সরকার বেসরকারি খাত থেকেই চাল আমদানি করবে। যদি বেসরকারি খাতের চেয়ে সরকারি খাতে কমে পাওয়া যায় তাহলে জিটুজি ভিত্তিতেই পুরো চাল আমদানি করা হবে।
‘দেশে খাদ্যশস্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে’ এমন বক্তব্য প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৭ জুন জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে দুই সপ্তাহ আগের তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, মোট মজুদ ১৬ লাখ ২৭ হাজার টন খাদ্যশস্যের মধ্যে চালের পরিমাণ ১২ লাখ ২৫ হাজার টন। প্রশ্নোত্তরের তথ্য অনুযায়ী, মজুদ অন্য খাদ্যশস্যের মধ্যে গম ৩ লাখ ৯৬ হাজার টন এবং ধান ৯ হাজার টন। প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘খাদ্য মজুদ বাড়াতে বর্তমান বোরো সংগ্রহ মৌসুমে চার লাখ মেট্রিক টন ধান ও ১২ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন চালসহ চাল আকারে সর্বমোট ১৫ দশমিক ১০ লাখ মেট্রিন টন খাদ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ মেট্রিন টন নির্ধারণ করা হয়েছে।’ অধিকতর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলতি অর্থবছরের ২৩ মে পর্যন্ত ৬ দশমিক ৩৪ লাখ টন চাল ও ৬ দশমিক ৮০ টন গম আমদানি করা হয়েছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
বিশ্লেষকরা বলেন, দেশে কয়েকদফা জ্বালানি তেল ও গ্যাস–বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। বিশেষ করে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। চাল–আটার দামও সিন্ডিকেটের কারসাজিতে উর্ধ্বমুখী। তাই বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানি হওয়ার কারণে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভবিষ্যত ঝুঁকি এড়াতে সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সংশ্লিষ্টরা সময়োপযোগী বলে আখ্যায়িত করেছেন। দেশের খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা এবং ঘাটতি না থাকলেও বাজারে সহনীয় মূল্যে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রচেষ্টাকে অভিনন্দিত করতে চাই। আমরা চাই বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকুক।